সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম বর্ণ দেশ নেই : প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই, বর্ণ নেই, দেশ নেই-কিছুই নেই। কাজেই এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আজ সোমবার পুলিশ সপ্তাহ ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ধন্যবাদ জানান।

সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান অতিথি হিসেবে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন, রাজারবাগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজনের করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হলে তাকে সালাম জানানো হয়। এসময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্যারেডের অনুমতি প্রার্থনা করেন। এরপর পুলিশের বিভিন্ন দল প্যারেড করে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পৌঁছলে তাকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও ঘোড়ায় চড়ে একদল পুলিশ সদস্য অভিবাদন জানিয়ে মঞ্চ পর্যন্ত নিয়ে আসেন। এরপর একে একে বার্ষিক কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ, বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য পদক বিতরণ, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির স্টল পরিদর্শন ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেড এবং মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক এবং যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গি দমনের মতো মাদক নির্মূল এবং নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে পুলিশ সদস্যদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।’

বিভিন্ন দূর্যোগ মুহূর্তে পুলিশের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায়ই দুর্যোগের ঘটনা ঘটে থাকে। অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অনেক সময় মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হয়ে থাকে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে বহু লোককে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। সেই দুর্যোগের সময় পুলিশ বাহিনীর বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২৯ জন পুলিশ সদস্য শেষ সময় জীবন দিয়েছেন। অগ্নিসন্ত্রাসকারী জামায়াত জোটের সন্ত্রাসের সময় পুলিশ যে সাহসিকতার ভূমিকা পালন করেছিলেন তার কারণে জনমনে শান্তি ফিরে আসে। আমরা চাই বাংলাদেশে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা থাকুক।’

জঙ্গিদমনে বাংলাদেশের পুলিশ বিশ্বের রোলমডেল হিসেবে সম্মান পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পুলিশবাহিনী জঙ্গি, মাদক এবং সন্ত্রাস দমনের কারণে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। তাদের পেশাদারিত্বের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আমি একটু অনুরোধ করব মাদক নির্মূলে যে অভিযান এই অভিযান চলমান থাকবে, অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে নিরাপদ সড়ক সৃষ্টি করতে হবে। নিরাপদ সড়ক নিয়ে মানুষের মধ্যে একটি জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। যখন তখন কেউ যেন দৌড় দিয়ে রাস্তা পার না হয়, সেজন্য জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে।’

বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখের ওপর মিয়ানমার শরণার্থী রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা বিধানেও পুলিশবাহিনী যথাযথ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের কাজ করে আমাদের পুলিশ ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছেন। তাদেরকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ বিভিন্নভাবে পুলিশের সেবা পাওয়ায় মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলেও জনান শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ পুলিশের কল্যাণে আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন সময়ে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন আমি সরকাররে এসেছিলাম তখনই পুলিশের জন্য স্টাফ কলেজ করে দিয়েছি। দায়িত্ব পালনকালে নিহত ও আহত পুলিশ সদস্যদের জন্য আমরা অনুদান দিয়ে যাচ্ছি। পুলিশ পরিদর্শকের জন্য বছরে এককালীন বেতনের সমান বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্তব্য অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারের জন্য রেশন ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

‘অবসরকালীন পুলিশ সদস্যদের জন্য আজীবন রেশন ব্যবস্থার বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। যারা অবসরকালীন ভাতা তুলে নেন, যাদের ১০ বছর হয়ে গেছে তাদের পুনরায় অবসর ভাতা দেয়ার ব্যবস্থাও সরকার পুনরায় বিবেচনা করছে। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য আরও আধুনিক এবং যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।’

ভবিষ্যতে পুলিশের কল্যাণে সরকারের কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দায়িত্ব পালনকালে চাকরিরত অবস্থায় যারা নিহত হন তাদের জন্য ৮ লাখ টাকা এবং আহত হলে ৪ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এ ছাড়া পুলিশের জন্য কমিউনিটি ব্যাংক করে দিয়েছি যা পুলিশের কল্যাণে ব্যবহার করা যাবে। ভবিষ্যতে আমাদের পুলিশের চাহিদা কত হবে, মোট জনসংখ্যার অনুপাতে ভৌগোলিক আয়তন সব কিছু বিবেচনা করে পুলিশ নিয়োগ করা হবে। পুলিশের যানবাহন সরঞ্জামাদি, অস্ত্রসহ অবকাঠামো নির্মাণ, প্রশিক্ষণ বৃদ্ধিসহ পুলিশ কল্যাণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বরাদ্দকৃত অর্থকে আমরা খরচ হিসেবে দেখি না। জনগণ সেবা পাচ্ছে বলেই আমরা ধরে নেই। এমনি করে সার্বিকভাবে মানুষের সেবার জন্য আমরা ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।’

‘আজ যারা পদকে ভূষিত হয়েছেন-এটা কাজের ক্ষেত্রে আরও প্রেরণা যোগাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ক্রাইমের ধরন পাল্টে গেছে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমাদেরকেও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে’-যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী

‘আমি চাই আমাদের পুলিশবাহিনী হবে জনবান্ধব। সেইভাবে আমাদেরকে প্রস্তুত হতে হবে। সকল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ক্যাডার কর্মকর্তাসহ সকল নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদেরকে কর্মস্থলে যাওয়ার আগেই বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য আমরা ব্যবস্থা করছি। এই প্রশিক্ষণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এই দেশকে আমরা আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করে করে তুলতে চাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের সমস্যা আমরা সমাধান করতে চাই। সকলের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। ছেলেমেয়েদের বই-খাতা সেটাও সরকারের পক্ষ থেকে দিয়েছি। উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। সকলের সহযোগিতা কামনা করি যেন বাংলাদেশকে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারি।’

এফএইচএস/এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।