মাঠের মানুষ বাবুলের ঠিকানা এখন বিছানা
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো বারান্দায় চৌকির উপরে শুয়ে আছেন সুন্দর এক মলিন চেহারার মানুষ। বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী তিনি। দেখেই বোঝা যায় প্রচণ্ড পরিশ্রমী মানুষ তিনি। কিন্তু এখন আর পরিশ্রম করতে পারেননা। বিছানায় শুয়েই দিন কাটে তার। কিছুদিন থেকে কোমরের ব্যথায় উঠে বসতেও পারছেন না তিনি। জাগো নিউজের এই প্রতিবেদককে দেখতেই বসতে বললেন। নাম জানতে চাওয়ার পর শুরু হলো কথা। নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন আমি বাবুল বায়।
উঠে বসার ব্যর্থ চেষ্টা করে বারান্দায় পাতানো চৌকির উপর শুয়ে বাবুল রায় জাগো নিউজকে জানালেন ২০০৬ সালের ২৬ আগস্টের সেই দিনের ঘটনা।
সেদিন ফুলবাড়ী উম্মুক্ত কয়লা খনির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর (তৎকালীন বিডিআর) সদস্যদের গুলিতে পঙ্গু হন বাবুল রায়। আগামীকাল বুধবার ৯ বছর পূর্তি হবে এ ঘটনার।
বাবুল রায় জানালেন, ফুলবাড়ী কয়লা খনির আন্দোলন শুধু আমার পা কেড়ে নেয়নি, আমার পরিবারের সুখ-শান্তি সব কেড়ে নিয়েছে। অভাব অনটনের কারণে আমার ৩ ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলেকে স্কুল ছাড়তে হয়েছে। তারা এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে আমার পরিবারটিকে রক্ষা করছে। ছোট ছেলের জন্ম হয়েছে ফুলবাড়ী আন্দলনের প্রায় ৪ মাস পর। তাকে এবার স্কুলে ভর্তি করা হবে।
খনি নিয়ে তিনি বললেন, ফুলবাড়ীবাসী জান দেবে তবু খনি করতে দিবেনা। পার্শ্ববর্তী বড় পুকুরিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বললেন, বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি করতে ৫ একর জমি লাগবে বলে খনি করার পর ৫০ একর জমি নিয়েও খনি হয়না। যখন-তখন বিভিন সময় বিভিন্ন জায়গায় মাটি দেবে যাচ্ছে। অনেকে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। সব জেনে শুনে ফুলবাড়ীর মানুষ খনি হতে দিবেনা এটাই স্বাভাবিক।
সংসার ও চিকিৎসা কিভাবে চলছে জানতে চাইলে বাবুল রায় জানালেন, সংসার চলছে ছেলেদের রোজগারে। চিকিৎসা চালিয়েছে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। আর সরকার যে টাকা দিয়েছিল সেটা ওই সময় খরচ হয়ে গেছে।
# তাও কি খনি হবি!
# আপনারা সাংবাদিকরা আমার ছেলেকে ভুলে থাকতে দেন না
# ফুলবাড়ী দিবস : শহীদের স্মৃতিস্তম্ভ পানির নীচে
এমএএস/পিআর