ইসি দাবি করলেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, এমন কথা নেই : মাহবুব তালুকদার
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করলেই যে তা সুষ্ঠু হয়ে যাবে -এমন কোনো কথা নেই। জনতার চোখ বলে একটা কথা আছে।’
বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ইটিআই ভবনে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত যেসব কাগজপত্র দেখেছি, তাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পর্যবেক্ষক পর্যন্ত সবার প্রতিবেদনে দুটি শব্দ অতিমাত্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। একটি ‘সন্তোষজনক’ এবং অন্যটি ‘স্বাভাবিক’। তার মানে কি আমাদের নির্বাচন খুবই সন্তোষজনক হয়েছে? এ ক্ষেত্রে পাবলিক পারসেপশন কী, তা নিজেদের কাছেই জিজ্ঞেস করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করার বিষয়ে আমি সবসময় গুরুত্বারোপ করেছি। এ গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অবশ্যই দৃশ্যমান হতে হবে। আমাদের ও আপনাদের সবার কর্মকাণ্ড জনতার চোখে পরীক্ষিত হবে। সুতরাং যথার্থ একটি গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার জন্য আমাদের সবাইকে অঙ্গিকারাবদ্ধ হতে হবে।’
সম্প্রতি ভারতে গিয়ে সেখানকার পত্রিকায় নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা নিয়ে লেখা একটি অনুচ্ছেদ পড়েছেন বলে জানান মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘তাতে দুয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা ছিল। এতে লক্ষ্য করা যায়, নির্বাচনী দায়িত্বে যারা নিয়োজিত সেই কর্মকর্তারা নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে অনড় ছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনিয়ম সম্পর্কেও তারা কঠোর অবস্থান গ্রহণে পিছপা হননি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত অনেক বৈপরীত্য সত্ত্বেও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা সমুন্নত রেখেছে। তার পেছনে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের অবদান কম নয়।’
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দুই বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে মাহবুব তালুকদারের। এ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিবেদনে বিশেষত নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনে সাধারণত কোনো নেতিবাচক বিষয় লিপিবদ্ধ করার বিষয়ে আমরা দ্বিধান্বিত। সবাই যেন কাগজপত্রে গা বাঁচিয়ে চলতে চান। যদি কেউ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আমার কথার বিরোধিতা করতে পারেন, তাহলে আমি খুশি হব। আমি মনে করি নির্বাচনে প্রকৃত চিত্রটি সব প্রতিবেদনে ওঠে আসা উচিত।’
উত্তর সিটির নির্বাচন ‘নাতিশীতোষ্ণ’
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনকে ‘নাতিশীতোষ্ণ’ নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাকে আমি নাতিশীতোষ্ণ নির্বাচন বলব। কারণ, এ নির্বাচনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কথা ছিল। উত্তাপ ও উষ্ণতা থাকার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত অবস্থার দৃষ্টি মনে হয়, তা হবে না। কেবল কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিছুটা উষ্ণতা আশা করা যায়। আসন্ন নির্বাচনের শৈতপ্রবাহ তাতে কেটে যাবে বলে আমরা মনে করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘গত উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় প্রধান বিরোধী প্রার্থী সমান সুযোগ না থাকার কথা বলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। যদিও সত্যিকার অর্থে এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান বিরোধী দলের কোনো প্রার্থী নেই। তবুও নির্বাচনে অনিয়মের কথা বলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘটনা যে ঘটবে না, তা বলা যায় না।’
এক্ষেত্রে একটি শুদ্ধ, আইনানুগ নির্বাচন করা উচিত হবে, যাতে নির্বাচনকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ না পান বলেও মনে করেন তিনি।
ডিএনসিসির এ নির্বাচনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বলেও মনে করেন মাহবুব তালকুদার। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর ঢাকার এ নির্বাচনের দিকে দেশবাসী, এমনকি উন্নয়ন সহযোগীরা তাকিয়ে আছেন। আমরা কী ধরনের নির্বাচন উপহার দিই, তা দেখার জন্য। নির্বাচনকালে আমরা কোনো চাপ, ভয়ভীতি বা প্রলোভনের কাছে নতি স্বীকার করবো না।’
ডিএনসিসির নির্বাচন উপলক্ষে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাহবুব তালুকদারেএসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
প্রদীপ দাস/আরএস/জেআইএম