টিআইয়ের প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত : তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:০১ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

দুর্নীতির সূচক নির্ণয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) কাজের পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ ও বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে তাদের প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

বুধবার সচিবালয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) দুর্নীতি সূচক প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তথ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার সারা বিশ্বে একযোগে দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশ করে টিআই। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের চার ধাপ অবনতি হয়েছে। ২০১৭ সালে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭তম। ২০১৮ সালে এটা হয়েছে ১৩তম।

এই প্রতিবেদনের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে কোন পদ্ধতিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এই ধারণাসূচক তৈরি করেছে। সেটি তারা সুনির্দিষ্টভাবে স্পষ্ট করেননি। আমরা যতদূর জানি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিসূচক নিরূপনের মেথডোলজি হচ্ছে কিছু তথাকথিত বিশেষজ্ঞ ব্যবসায়ীর মতামত গ্রহণ করা। তাদের বিভিন্ন জায়গায় নানা নামে কিছু কমিটি আছে, সেই কমিটিগুলোর মাধ্যমে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। অর্থাৎ তাদের মেথডোলজিটাই ত্রুটিপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনা যে পদ্ধতি ব্যবহার করে সেটি স্বচ্ছ নয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিসূচক তৈরির পদ্ধতিটার মধ্যেই ট্রান্সপারেন্সি নেই। তাদের কাজের পদ্ধতি ট্রান্সপারেন্ট নয়।’

আপনারা কি এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছেন- জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ডেফিনেটলি, আমরা মনে করি এই প্রতিবেদন একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন। তারা খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।’

তাদের কাছে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ চাইবেন কিনা- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) ইতোমধ্যে তাদের কাছে তথ্য চেয়েছে, কোন পদ্ধতিতে এটি করেছে সেই ব্যাখ্যা চেয়েছে। আশা করি, তারা দুদককে সেই ব্যাখ্যা দেবেন। আর দিতে ব্যর্থ হলে আমি আশা করব তারা তাদের কাজের পদ্ধতির মধ্যে ট্রান্সপারেন্সি আনবেন। এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকবেন।’

‘অন্ধ সমালোচনা কিংবা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার জন্য প্রতিবেদন প্রকাশ করা, নিজেদের সংগঠনকে আলোচনায় টিকিয়ে রাখার জন্য এবং বৈদেশিক ফান্ড পাওয়ার উদ্দেশ্যে (প্রতিবেদন) প্রকাশ করে, সেটি সমীচীন নয়। আশা করি, দুদকের আহ্বানে সঠিক জবাব তারা দেবেন, দিতে ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে দুদক নিশ্চয়ই কোনো একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’- বলেন হাছান মাহমুদ।

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নির্বাচনের পর নতুন সরকার যথন গঠিত হলো তথন নির্বাচন নিয়ে টিআইবি একটি গবেষণা প্রতিবেদন না কি উপস্থাপন করেছিল। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী সেটি গবেষণা প্রতিবেদন। অথচ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনা নির্বাচনে অবজারভার ছিল না। তাদের বক্তব্য আর বিএনপির বক্তব্য ৮০ শতাংশ মিল ছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বক্তব্য দেখে মনে হয়েছে বিএনপির হয়ে যেন একটা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন। সেটি যখন হালে পানি পায়নি তখন গতকাল (মঙ্গলবার) দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশ করেছেন। এটি করে আন্তর্জাতিকভাবে দেশ, দেশের জনগণ ও সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার একটি প্রচেষ্টা চালিয়েছেন মাত্র।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যখন বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রশংসা করে তখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিক হাতিয়ার তুলে দেয়ার উদ্দেশ্যে তারা এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে আমরা মনে করি। যেটি সমীচীন নয়।’

তিনি বলেন, ‘এই প্রতিবেদন নিয়ে দুদকও তাদের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা কোনো সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির ভিত্তিতে এই ধারণাসূচক তৈরি করেছেন তাদের প্রতিবেদনে সেটার কোনো স্পষ্টতা নেই। সুতরাং এটি প্রকৃতপক্ষে একটি মনগড়া প্রতিবেদন।’

টিআইবির উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা দুদককে জানান, সেটি সরকারের কাছেও উপস্থাপন করুন। সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করবে। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন না। কাজের পদ্ধতির মধ্যে যে ট্রান্সপারেন্সির অভাব আছে সেটি দূর করুন।’

বিএনপি আমলের ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন আপনারা। এখন প্রত্যাখ্যান করছেন কেন? জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তখন যথেষ্ট কারণ ছিল, রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতি হয়েছে। সেটি প্রমাণিত হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া নিজে কালো টাকা সাদা করেছেন। এখন কোন কারণের ভিত্তিতে, তা প্রতিবেদনে নেই।’

আরএমএম/এমবিআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।