‘টিআইবি দুর্বল, আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২২ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রতিবেদনে দুর্নীতি বাড়ার পেছনে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেয়ার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, আমাদের দুর্বল বলাটা বরং ওনারাই দুর্বল। আজ পর্যন্ত আমি কখনওই বলি নাই যে আমরা স্বাধীন নই। আমরা সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। সেই কারণে আমাদের যে ম্যানডেট আছে আইনে, আমরা সেই আইন নিয়ে যাচ্ছি। কেউ তো আমাদের বাধা দিচ্ছে না।

মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় দুদক চেয়ারম্যান একথা বলেন।

অপর এক অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইন আমাদের শিরোধার্য। সেটাকে পরিবর্তন করার কোনো ইচ্ছা বা উদ্যোগ আমাদের নাই। পার্লামেন্ট হচ্ছে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য। জনগণের ইচ্ছায় তৈরি হওয়া আইন পরিবর্তন করার জন্য কোনো উদ্যোগ দুদক নেবে না। দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করে এমন কোনো আইন আজ পর্যন্ত হয় নাই। কাউকে ধরা বা কাউকে প্রসিকিউট করার ক্ষেত্রে আমাদের কেউ বাধা দেয় নাই।

তিনি বলেন, অনেকে টকশোতে বলেন- এইটা কী দুদকের কাজ? আরে মামলা করেন না দুদকের বিরুদ্ধে যে দুদক এইটা বেআইনি করেছে। আমরা সেটা কোর্টে ফেস করব। আমরা মোটেও ভিত নই। ওনারা (টিআইবি) সঠিক বলেন নাই, আমরা স্বাধীন। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আমরা অনেক বড় দুর্নীতিবাজকে ধরতে পারি নাই। উদাহরণস্বরূপ, দুর্নীতিবাজ এখন যদি লন্ডনে বসে থাকে।

টিআইবিকে পরামর্শ দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা সরকার বা রাষ্ট্রের বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভালো কাজটা আপনারা মূল্যায়ন করবেন। প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো কাজগুলোকে যদি আপনি না বলেন, শুধু খারাপটাই বলতে থাকেন তাহলে সেটা আর প্রতিষ্ঠান হতে পারবে না। টিআইবি তখনই একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পরিণতি হবে যখন টিআইবি ভালো-খারাপ দুইটাই বলবে।

অর্থপাচার সম্পর্কে তিনি বলেন, অর্থপাচার সারাবিশ্বের সমস্যা, যে কারণে সব দেশেই মানিলন্ডারিং আইন পাস হয়েছে। আমরা দুর্নীতি বন্ধ করতে পারব না, আমরা দুর্নীতি কমাতে পারব। জনগণকে সচেতন করতে পারব। এখন কথা হচ্ছে যে সেই সচেতনতা বৃদ্ধিতে, দুর্নীতি কমাতে আমাদের কমিটমেন্ট আছে কি-না, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট আছে কি-না সে জিনিসগুলো আমাদের দেখতে হবে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, প্রতিবছরই টিআইবি এই রিপোর্ট তৈরি করে, টিআইবিকে অনেক আগেও আমরা বলেছি যে আপনারা আপনাদের মেথডলজি আমাদের জানান। আপনারা ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগার দিয়ে বলেন। আমরা এখনও রিপোর্ট পাইনি, পেলে ভালো হতো। আপনাকে ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগার দিয়ে বলতে হবে দুর্নীতি এভাবে কমেছে।

তিনি বলেন, আপনি যখন কাউকে জিজ্ঞাসা করবেন ভাই দেশে কোনো দুর্নীতি আছে কি-না, তখন সে বলবে হ্যাঁ, হ্যাঁ, দেশে অনেক দুর্নীতি। কিন্তু এটা তো সত্য সারাদেশে দুর্নীতির ব্যাপারে জনসাধারণ সচেতন হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং যারা দুর্নীতির কাছাকাছি থাকেন বা যাদের সুযোগ থাকে, আমরা তো মনে করি তারা অনেক সচেতন হয়েছে। এই সচেতনতাই প্রমাণ করে দুর্নীতি আসলে, এটা নিম্নগতির দিকে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শুধু টিআইবির রিপোর্ট দিয়ে তো আর কাজ হবে না। আর শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে দুর্নীতি কমানো, সেটাও হয়তো সম্ভব না। সবাই মিলে একসঙ্গে সম্মনিত, সমন্বিতভাবে যদি কাজটা না করি সেক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন বা কমানো সম্ভব না।

তিনি বলেন, আমরা আশা করব, যে দুর্নীতি কেন? তারা বলেছে বেড়েছে, সেই বাড়ার কারণ কী এবং সেই কারণগুলোকে অ্যাড্রেস করার জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন নিশ্চয়ই টিআইবি সেটা বলবে। যদি টিআইবির রিপোর্টে সেটা না থাকে তাহলে এই রিপোর্ট কোনো ক্রমেই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, টিআইবি বলেছে, আমরা অভিনন্দন জানাই। তবে আমরা টিআইবির কাছে ব্যাখ্যাটা চাই। আপনারা কেন বললেন? দুর্নীতি কোথায় কোথায় বেড়েছে এ সব ফ্যাক্টস ফিগার আপনাদের কাছে আছে কি-না এবং যে সব কারণে দুর্নীতি বেড়েছে তার বিশ্লেষণ আপনাদের কাছে আছে কি-না। এইগুলো যদি বলতে পারেন, তবে আমরা আমাদের কর্মপদ্ধতি পরিবর্তন করতে পারব।

দেশের উন্নয়ন হচ্ছে-এটা টিআইবি মানে কী মানে না? সামাজিকভাবে সচেতনতা বেড়েছে কি-না এই প্রশ্ন রাখেন দুদক চেয়ারম্যান।

এইউএ/জেএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।