প্রধানমন্ত্রীর নামে বার্ন ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা বানানে এ কি হাল!

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১২:৩১ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

‘বাবা, ওই যে উঁচু ভবনটির উপরে ইন্টারেস্টিং একটা লেখা দেখ।’ স্কুলপড়ুয়া ছেলের কথায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তাকিয়ে দেখেন লেখাটি আসলেই ইন্টারেস্টিং! বহুতল ভবনটির উপরিভাগের বাইরের দেয়ালে উপর থেকে নিচে চারটি লাইনের প্রথমটিতে বাংলায় ‘শেখ হাসি’ দ্বিতীয় লাইনে ‘জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক’, তৃতীয় লাইনে ইংরেজি হরফে ‘শেখ হাস’ ও চতুর্থ লাইনে ইংরেজিতে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন’ লেখা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে স্থাপিত ১৮ তলা ভবনবিশিষ্ট ৫শ' শয্যার ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’র বাইরের দেয়ালে অসম্পূর্ণ এ লেখাটি দেখতে দৃষ্টিকটু লাগে। বকশিবাজার মোড় থেকে চাঁনখারপুলের দিকে যাতায়াতকারী সবাই কিছুদিন ধরে এ লেখাটি দেখে হাসাহাসি করছেন। তারা বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ড দ্রুত ঠিক করা উচিত। লোকজন এ-ও জানতে চেয়েছেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ বার্ন ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু হবে কবে?’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন মাস আগে উদ্বোধন হলেও এখনও চালু হয়নি আগুনে পোড়া রোগীদের সুচিকিৎসায় রাজধানী ঢাকায় নির্মিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ।'

গত বছরের ২৪ অক্টোবর বর্তমান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর চাঁনখারপুলে দুই একর জমিতে ৯১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ তলাবিশিষ্ট সুউচ্চ এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এটি চালুর ফলে আগুনে পোড়াসহ বিভিন্নভাবে দগ্ধদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।’ কিন্তু তিন মাসেও পোড়া রোগীদের চিকিৎসা এখানে শুরু করা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এ হাসপাতালটির জন্য পৃথক বিদ্যুৎ স্টেশন স্থাপন, চিকিৎসক ও নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, যন্ত্রপাতি স্থাপন করা সম্ভব না হওয়ায় সহসা চালু হচ্ছে না। আরও কয়েক মাস পোড়া রোগীদের চিকিৎসা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটেই করতে হবে। দেড়শ শয্যার এ হাসপাতালটিতে দুই থেকে আড়াইগুণ বেশি রোগী রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে স্থাপিত ৫শ’ শয্যার ইনস্টিটিউটটি চালু হলে চাপ কিছুটা কমবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৫শ’ শয্যার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটটি নির্মাণের অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁনখারপুলে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

২৭ এপ্রিল বাংলদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এর নির্মাণকাজ শুরু করে। বহুতলবিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউটটির মাটির নিচে তিনতলা বেজমেন্ট। সেখানে গাড়ি পার্কিং ও রেডিওলজিসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভাগ রাখা হচ্ছে।

ইনস্টিটিউটটিতে ৫০০ শয্যা, ৫০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ১২টি অপারেশন থিয়েটার ও অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড থাকছে।

প্রতিষ্ঠানটি কবে নাগাদ চালু হবে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ‘বিদেশ থেকে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আনা, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে উদ্বোধন হতে বিলম্ব হচ্ছে।’

তিনি জানান, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি এসে গেছে। জনবল নিয়োগও দ্রুত শুরু হবে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে এ ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর নামের বানান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. সামন্তলাল বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এমইউ/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।