চাপের কাছে মাথা নত করবেন না : দুদক চেয়ারম্যান
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আজকাল কাউকে ধরলে বলতে শুনি, চাপের মুখে পড়ে করেছি। কিসের চাপ! মুখের কথায় কোনো কাজ করবেন না। যিনি চাপ দেবেন, তাকে বলবেন দয়া করে লিখিত দেন। লিখিত দিলে এরপর আপনার আর কোনো ভয় নেই। আবারও বলছি, চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। কারণ চাপওয়ালা আপনাকে বাঁচাতে পারবেন না।’
রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা দুদককে ভয় পাবেন না। ভয়ের কিছু নেই। দুদক কোনো ভয়ের বস্তু নয়। দুদকের একটি আইন আছে। সেই আইনে আপনি চাইলেও পালাতে পারবেন না। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত মামলা হবে না, যতক্ষণ আপনার বিরুদ্ধে কাগজপত্রে প্রমাণ পাওয়া না যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাগজপত্র যদি চাপওয়ালার কাগজপত্র হয়, তাহলে আপনি বেঁচে যাবেন। আবারও চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। আর আপনি চাপ সহ্য করবেন কেন? আপনি তো কারও দয়ায় চাকরিতে আসেননি। কিন্তু আপনি চাপে পড়ে অন্যায় করলে ওই চাপওয়ালা আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। কারণ দুদকের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা চাপওয়ালারও নেই।’
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের আওতার বাইরে। কারণ সেখানে যারা পড়ে তারা অনেক বড় হয়ে গেছে। তারা নিজেদের ভালো বুঝতে পারে। কিন্তু যারা স্কুলে পড়ে, তাদের সঠিক শিক্ষাটা দিতে হবে। কয়েকটি স্কুলে গিয়ে আমি হতাশাজনক চিত্র দেখেছি। ক্লাসে টিচার যেতে হবে। অবশ্যই যেতে হবে। আমার বাচ্চা এ-প্লাস পেল কি-না সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। যদি ক্লাসে টিচার ভালোভাবে পড়ায় তাহলে এমনিতেই এ-প্লাস পাবে। আমরা ক্লাস টেন পর্যন্ত টার্গেট করেছি। ১০ বছর যদি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে পারি, ১০ বছর পর সুশিক্ষিত নাগরিক পাব।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেনকে উদ্দেশ্য করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনি তো মনে হয় বিভিন্ন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে আছেন। স্কুলে যান। ক্লাসে ঢোকার দরকার নেই। হেডমাস্টারের রুমে যান। টিচাররা কী করছে, সেটা দেখুন। ম্যানেজিং কমিটিগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না, এটা আমি সরকারকে জানিয়েছি।’
চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের অনেক কষ্ট আছে জানি। কিন্তু আপনাদেরও মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশটা গরিব দেশ। আমরা একদিনে আমেরিকা হয়ে যাব না। কষ্ট হলেও কর্মস্থলে থাকেন। জনগণকে সেবা দেন।’
‘হুণ্ডির মাধ্যমে খুব বেশি টাকা বিদেশে যাচ্ছে না। টাকা যাচ্ছে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। কাস্টমসকে বলব, ফেব্রুয়ারি মাসে কত ওভার ইনভয়েসিং হল, সেটার একটা তালিকা মার্চে দুদকের কাছে পাঠিয়ে দেন। আমরা ব্যবস্থা নেব। দিনের সবসময় ২০০ লোক নাকি কাস্টমের বারান্দায় ঘোরাফেরা করে। এরা সেখানে চাকরি করে না। তদবিরের জন্য যায়। এসব আলতু-ফালতু লোককে জায়গা দেবেন না’- বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার ফারুক আহমেদ, সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনাসহ বিভিন্ন সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধান কর্মকর্তারা।
আবু আজাদ/জেএইচ/পিআর