লালুর বীরপ্রতীক খেতাব নিয়ে সংশয়


প্রকাশিত: ০৫:৫৭ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০১৪

৬৭৬ জন খেতাবি বীরমুক্তিযোদ্ধার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বীরবিচ্ছু ও সর্বকনিষ্ঠ বীরমুক্তিযোদ্ধা হলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরশহরের সুতিপলাশ পাড়া গ্রামের শহীদুল ইসলাম লালু। তিনি মাত্র ১৩ বছর বয়সে মহান স্বাধনীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখে বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছিলেন।

কি করেছিলেন লালু? অপারেশন গোপালপুর থানা নামে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের ঘটনাটি একান্তই শহীদুল ইসলাম লালুময়। যুদ্ধের উত্তুঙ্গ দিনগুলোতে গ্রুপ কমান্ডার পাহাড়ি তাকে নির্দেশ দেন গোপালপুর থানার হালহকিকত জেনে আসতে, মুক্তিযোদ্ধারা কিভাবে তা দখল করতে পারে। লালু গিয়ে সেখানে তার এক দূর সম্পর্কের ভাই সিরাজের দেখা পান। সিরাজ পাকিস্তানী সেনাদের দালালী করে, তাকেও একই কাজ করার প্রস্তাব দেয়। লালু রাজী হয়ে যান। পরের দফা তিনটি গ্রেনেড নিয়ে থানায় হাজিরা দেন তিনি। অল্পবয়স বলে তাকে চেক করা হয় না। মুক্তিযোদ্ধাদের আগেই জানান দিয়ে রেখেছিলেন তার অভিপ্রায়। পুরো পুলিশ স্টেশন একবার চক্কর মেরে এসে, এক বাংকারে প্রথম গ্রেনেড চার্জ করলেন লালু। ভীত ও হতভম্ব পাকিস্তানীরা আন্দাজে গুলি ছুড়তে শুরু করে লক্ষহীন। শুয়ে লালু দ্বিতীয় গ্রেনেডটি ছোড়েন, কিন্তু এটা ফাটে না। এখান থেকে আর বেরুনো হবে না- এই ভয় পেয়ে বসে তাকে। তারপরও তৃতীয় গ্রেনেডটি সশব্দে ফাটে আরেকটি বাংকারে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও এগিয়ে এসেছেন। গোলাগুলির এই পর্যায়ে সিরাজ এসে লালুকে একটি অস্ত্র ধরিয়ে দেয়, জিজ্ঞেস করে চালাতে পারে কিনা। লালু তাকে পয়েন্ট ব্ল্যান্ক রেঞ্জে গুলি করেন। এই ঘটনায় কিছু পাকিস্তানী পালায়, কিছু ধরা পড়ে, মারা যায় অনেক। হতাহতের মধ্যে দিয়েও মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেন গোপালপুর থানা। বলতে গেলে শহীদুল ইসলাম লালুর একক কৃতিত্বে।

মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে যখন টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী স্কুলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কাদেরিয়া বাহিনীর সকল মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র জমা দিচ্ছিল, তখন শহীদুল ইসলাম লালুও তার ব্যবহ্নত স্টেনগানটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধু অবাক হয়ে শহীদুল ইসলাম লালুর পিঠ থাপ্পড়ে বলেছিলেন_ `সাব্বাস বাংলার দামাল ছেলে।` যখনসহ যোদ্ধাদের কাছ থেকে লালুর ব্যাংকার ধ্বংসের কথা শুনলেন তখন বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে কোলে তুলে নিয়ে বলে ছিলেন_ `বীর বিচ্ছু।`

সেই ছবি দিয়ে একটি পোস্টারও পরবর্তীতে ছাপা হয়ে ছিল। শেখ রাসেল ও গোপালপুরের শহীদুল ইসলাম লালু এক মঞ্চে বসে ছিলেন। এই দৃশ্য পরবর্তীতে বাঘা বাঙালি ছবিতে দেখানো হয়ে ছিল। বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম লালু তার বীরপ্রতীক খেতাবের কথা ১৯৯৬ সালে জানতে পারেন।

এর পর শহীদুল ইসলাম লালু সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০০০, আজীবন সংবর্ধনা ২০০৩, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া কর্তৃক পুরস্কার ও অর্থিক অনুদান, মিশরের রাষ্ট্রদূত কর্তৃক পুরস্কারসহ আরো অনেক খেতাবে ভূষিত হয়ে ছিলেন। তার পরও মানবেতর জীবনযাপন করে চার সন্তানের জনক বঙ্গবন্ধুর বীর বিচ্ছু ও দেশের সর্ব কনিষ্ঠ বীরপ্রতীক শহীদুল ইসলাম লালু ২০০৯ সালের ২৫ মে ঢাকাস্থ মীরপুরে বাস ভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এ বীরমুক্তিযুদ্ধার মরদেহ মিরপুরেই সমাহীত করা হয়।

স্বাধীনতা অর্জনের ৪৩ বছর পর গতকাল মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। নতুন এ সংজ্ঞা অনুসারে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে যাদের বয়স ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১৫ বছর পূর্ণ হয়েছিল শুধুমাত্র তারাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত হবেন। লালু বেঁচে নেই। তবে তার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট কি বাতিল হয়ে যাবে? তার সন্তানরা কি জানবে যে তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না! তার বীরপ্রতীক সনদ কী মূল্যহীন?

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।