রোহিঙ্গা সংকটে ২০১৯ সালে প্রয়োজন ৯২ কোটি ডলার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০৯ এএম, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) ২০১৯ তৈরি করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির চলতি বছরের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন খাতে সংকট মোকাবেলা পরিকল্পনায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী উখিয়া ও টেকনাফের প্রায় ১৩ লাখ মানুষের জন্য ৯২ কোটি পাঁচ লাখ মার্কিন ডলারের অর্থায়নের চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে।

সবগুলো খাতে যে অর্থ ব্যয় করা হবে এবং যে সেবা পৌঁছে দেয়া হবে তাতে শুধু সাময়িক নয়, এখানকার মানুষ দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাবে। কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।

জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান ২০১৯ থেকে জানা যায়, ১২টি খাতে ভাগ করে অর্থায়নের প্রাক্কলন করেছে জাতিসংঘ। গতবারের মতো এবারও খাদ্য নিরাপত্তায় চাহিদা সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে।

উখিয়া ও টেকনাফের তিন লাখ ৩৫ হাজার ৯৩০ জন স্থানীয় ও ৯ লাখ ৬ হাজার ৫১২ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ মোট ১২ লাখ ৪২ হাজার ৪৪২ জনের জন্য মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার আওতায় আনতে প্রয়োজন পড়বে ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এরপরই ডব্লিউএএসএইচ (ওয়াশ) প্রকল্পে ১২ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজন পড়বে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।

এখানে থাকা জনগোষ্ঠীর ৯ লাখ ৯ হাজার জনের আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এদের মধ্যে ৯ লাখ ৫ হাজার জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রয়োজন পড়বে ১২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য পুরো ১২ লাখ জনগোষ্ঠীকেই নির্ধারণ করা হয়েছে। আর স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজন পড়বে ৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার।

এছাড়া সাইট ব্যবস্থাপনার জন্য ৯ কোটি ৮৭ লাখ, সুরক্ষা ১২ লাখ মানুষের প্রয়োজন হলেও ৯ লাখ ৫০ হাজার জনের জন্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার।

শিক্ষার জন্য পাঁচ কোটি ৯৫ লাখ, পুষ্টির জন্য চার কোটি ৮০ লাখ, কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য এক কোটি ১০ লাখ, সমন্বয়ের জন্য ৪২ লাখ, সরবরাহের জন্য ২৮ লাখ এবং জরুরি প্রয়োজনে ১২ লাখ ডলারের চাহিদা প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রবেশের পর থেকে প্রতিবছরই জেআরপি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। জেআরপি ২০১৯-তে গত বছরের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে সমানভাবে সুরক্ষাসেবা পৌঁছে দিতে না পারা, বর্ষায় বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, সুরক্ষা ও লিঙ্গবৈষম্যকে এখনো মূলধারায় নিয়ে আসতে না পারা, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রোধে পুরুষদের সম্পৃক্ত করা, নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষায়িত সেবার অভাব, এলজিবিটিআই, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধদের জন্য অপ্রতুল অভিগমন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা এবং অন্যান্য ফাঁক-ফোকরগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

ঝুঁকি পরিস্থিতি উন্নয়নে শরণার্থী জনগোষ্ঠীর উদ্বেগের বিষয়গুলোকে টেকসই সমাধানে জোর দেয়া হয়েছে ২০১৯ সালের জেআরপিতে। এছাড়া ২০১৯ সালের জেআরপিতে চারটি খাতকে বিশেষ নজর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো ১৩ লাখ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, সাড়ে ৯ লাখ মানুষের সুরক্ষা ও সাড়ে চার লাখ জনগোষ্ঠীর শিক্ষা। সর্বশেষ কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগে আসছে বছরে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

বিশ্বের সবেচেয়ে দ্রুতবর্ধমান শরণার্থী সংকট হিসেবে রোহিঙ্গা সংকটকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে। এতে বলা হয়েছে, ২৫ আগস্ট ২০১৭ এর পর থেকে বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা শরণার্থী হিসেবে এসেছে।

এ বিশাল সংখ্যক শরণার্থীকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় দুই হাজার একর জমির উপর থাকার জায়গা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। এতে করে সেখানকার অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা ও পানি সরবরাহ, পরিবেশ, বিশেষ করে বনসম্পদের ওপর ব্যপক চাপ সৃষ্টি করেছে।

জেপি/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।