স্ত্রী মৃত্যুর ভুয়া সনদে ইয়াবা ব্যবসায়ীর জামিন
স্ত্রী মৃত্যুর ভুয়া সনদ দাখিল করে কক্সবাজার জেলা জজের আদালত থেকে উখিয়ার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী হামিদুল হক ভুলুর (৪৭) অন্তর্বর্তীকালীন জামিন লাভের ঘটনায় তাকে ও সনদদাতা উখিয়ার পালংখালী ইউপি মেম্বার ফজল কাদের ভুট্টোকে আদালতে তলব করা হয়েছে।
তাদেরকে আগামী ৩১ আগস্ট কক্সবাজার জেলা জজের আদালতে সশরীরে হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোববার বিকেলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের হাকিমপাড়ার মৃত আহম্মদ হোসেনের ছেলে ও এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী হামিদুল হক ভুলু (৪৭) গত ১২ এপ্রিল রাতে নিজের বসতবাড়ি থেকে ৬শ পিস ইয়াবাসহ পুলিশের অভিযানে আটক হন। তার সঙ্গে এক সহযোগীও ধরা পড়েন। এসময় পালিয়ে যান অপর সহযোগী। এ ঘটনায় ৩ জনের বিরুদ্ধে মাদক আইনে উখিয়া থানায় মামলা হয় (মামলা নং ২৬, তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৫ ইং)।
মামলার প্রধান আসামি করা হয় ভুলুকে। ঘটনার পর তার জামিনের জন্য পরিবার ও সহযোগীরা শুরু করেন জোর তদবির। কিন্তু আদালতে বারবার জামিন আবেদন প্রত্যাখাত হলে তারা হাইকোর্টে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।
হাইকোর্টেও প্রত্যাখাত হলে এ ইয়াবা সিন্ডিকেট জালিয়াতির ফন্দি আটেন। এরই অংশ হিসেবে স্ত্রী মৃত্যুর ভুয়া সনদ আদালতে দাখিল করেন।
উখিয়ার ৫নং পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজল কাদের ভুট্টোর (প্রকৃতপক্ষে চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী, ভূট্টো একজন মেম্বার) সিল মোহর যুক্ত একটি মৃত্যু সনদ গত ১১ আগস্ট আদালতে দাখিল করে আসামি পক্ষ। উক্ত সনদে ইয়াবা ব্যবসায়ী হামিদুল হক ভুলুর স্ত্রী খুরশিদা বেগম আগের দিন ১০ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে উল্লেখ করা হয়।
এ সনদ পেয়ে সরল বিশ্বাসে আদালত আসামিকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। আসামির জিম্মাদার হন আরেক চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী ফরিদ আলম। ঘটনাটি ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে আদালতপাড়ায় তোলপাড় শুরু হয়। এ নিয়ে জেলা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার ক্ষুব্ধ হন।
রোববার মামলার শুনানির দিন আসামি ভুলু আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেন।
আদালত আগামী ৩১ আগস্ট কক্সবাজার জেলা জজের আদালতে সশরীরে হাজির থাকতে মামলার আসামি হামিদুল হক ভুলু (৪৭) ও সনদদাতা উখিয়ার পালংখালী ইউপি মেম্বার ফজল কাদের ভুট্টোকে নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় আদালতপাড়ায় নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়।
কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মমতাজ আহমদ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে এ ধরনের সনদে স্বাক্ষর করার কথা অস্বীকার করেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ফজল কাদের ভুট্টো। তিনি হামিদুল হক ভুলুকে (৪৭) চেনেন না এবং তার স্ত্রী মৃত্যুর বিষয়টিও অবগত নন বলে জানান।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, হামিদুল হক ভুলুর বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পাশেই অবস্থিত। তার স্ত্রী খুরশিদা বেগম মারা যাননি, এখনও তিনি বেঁচে আছেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে স্বামী-স্ত্রী এলাকার বাইরে রয়েছেন।
সায়ীদ আলমগীর/এমজেড