জুলহাস-তনয় হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় আসাদুল্লাহ
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যাকাণ্ডে আসাদুল্লাহ (২৫) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ওই হত্যাকাণ্ডে আবদুল্লাহ সরাসরি অংশ নেয় বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন >> জুলহাস-তনয় হত্যা : অন্যতম অভিযুক্ত গ্রেফতার
বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, আসাদুল্লাহর সাংগঠনিক নাম ফখরুল ওরফে ফয়সাল ওরফে জাকির ওরফে সাদিক। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাকে টঙ্গী থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিল আসাদুল্লাহ।
মামলার তদন্ত সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু তনয়কে হত্যার পর এর দায় স্বীকার করে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলাম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় কাউন্টার টেররিজম (সিটি) বিভাগ। তদন্তে ওই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হতে থাকে। বিভিন্ন পর্যায়ে ওই হত্যাকাণ্ডে ১৩ জন সম্পৃক্ত ছিল। এর মধ্যে আসাদুল্লাহ ছিল অন্যতম।’
‘দীর্ঘ তদন্ত ও গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, হত্যাকাণ্ডের দিন ঘটনাস্থলে ছিল সাতজন। যার মধ্যে পাঁচজন ছিল কিলার গ্রুপের, বাকি দুজন ছিল ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের।’
‘এখন পর্যন্ত ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যে কিলার গ্রুপের দুজন হলো- আসাদুল্লাহ এবং আগে গ্রেফতারকৃত আরাফাত। বাকি দুজন ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের যাবের ওরফে জুবায়ের ও সায়মন।’
আসাদুল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আনসার আল-ইসলামের সামরিক শাখার দাওরা প্রশিক্ষক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে সে। আনসার আল-ইসলামে যোগদানের আগে সে যশোরের নওয়াপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিল। আসাদুল্লাহ বাড্ডা, আশকোনা, গাজীপুরের বিভিন্ন আস্তানায় বাসা ভাড়া নেয়ার পদ্ধতি, নিরাপত্তার বিষয়, ডে-অ্যাম্বুশ, সম্মানজনক মৃত্যু, চাপাতি চালানো, পিস্তল চালানো, টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করার এলাকা রেকি করা এবং হত্যার সময় ও স্থান নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে সামরিক ট্রেনিং গ্রহণ করে। ২০১৬ সালে উত্তর বাড্ডার সাতারকুলে পুলিশের ওপর হামলা করে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছিল আসাদুল্লাহ।’
আরও পড়ুন >> জুলহাস-তনয় হত্যা মামলার প্রতিবেদন ২২ জানুয়ারি
২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগান লেক সার্কাস রোডের এক বাসায় ঢুকে ইউএসএআইডি কর্মকর্তা, সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু থিয়েটারকর্মী মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার রাতেই জুলহাসের ভাই মিনহাজ মান্নানের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
জুলহাস মান্নান সমকামীদের অধিকার নিয়েও কাজ করতেন। তিনি সমকামীদের নিয়ে প্রকাশিত সাময়িকী ‘রূপবান’ এর সম্পাদকও ছিলেন। মাহবুব রাব্বী তনয় ছিলেন লোকনাট্য দলের কর্মী। পিটিএ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ‘শিশু নাট্য প্রশিক্ষক’ হিসেবে তিনি কাজ করতেন।
এআর/এমএআর/পিআর