রাজধানীর ৫৭ পয়েন্টে পুলিশের অভিযান
সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে ১৭ দিনের বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। ৫৭ পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। সেখানে ট্রাফিক নজরদারির পাশাপাশি আইন প্রয়োগের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে চায় ট্রাফিক পুলিশ।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ট্রাফিক শৃংখলা ফেরাতে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযান চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
মঙ্গলবার রাজধানীর একাধিক স্থান সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশেষ অভিযানে পুলিশের সহযোগিতায় মাঠে কাজ করছে রেড ক্রিসেন্ট, গার্ল গাইডস, বিএনসিসির সদস্যরা। তবে প্রয়োজনে রোভার স্কাউটকেও সংযুক্ত করার কথাও জানিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপি জানায়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের সঙ্গে সমন্বয় করে অবশিষ্ট জেব্রা ক্রসিং, রোড মার্কিংগুলো দৃশ্যমান, স্থাপনার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ, মূল সড়কের পাশে অবস্থিত স্কুল-কলেজের ক্লাস শুরু এবং ছুটির সময়ে উক্ত এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ও স্কুল-কলেজের ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা এবং এসব অঞ্চলে যথাযথ ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে অননুমোদিত হাইড্রোলিক হর্ন, দ্রুতগতির যানবাহন, বেপরোয়া গতি, হুটার বা বিকন লাইটের ব্যবহার, উল্টো পথে চলাচল এবং মোটরসাইকেলের আরোহীদের হেলমেট পরিধানসহ সকল প্রকার ট্রাফিক আইন লংঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুপুরে কারওয়ান বাজার এলাকায় দেখা যায়, যত্রতত্র রাস্তা পারাপারে বাধা দিচ্ছে রেড ক্রিসেন্ট, বিএনসিসি ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। যাত্রী সাধারণ ও পথচারীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে ট্রাফিক সচেতনতামূলক লিফলেট। ট্রাফিক নির্দেশনামূলক বিভিন্ন ইন্ডিকেটরও ব্যবহার করতে দেখা যায়। কারওয়ান বাজার পথচারীদের রাস্তা পারাপারে আন্ডারপাস ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মকাণ্ডও ছিল চোখে পড়ার মতো।
বাংলামোটর ও শাহবাগে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের বাধ্য করতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। গাড়ি চালানোর সময় স্টপেজ ব্যতীত বাস দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। দরজা খুলে চলাচল করায় বেশ কয়েকটি বাস সড়কে আটকে দরজা বন্ধ করে ফের ছেড়ে দিতে দেখা যায়।
পথচারী সোবহান মিয়া বলেন, ‘পুলিশের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এটা যেন অব্যাহত থাকে।’
পথচারী মাফরুহা নাজনীন বলেন, ‘আজকের দৃশ্য আশ্চর্যজনকভাবে পরিবর্তন হয়েছে দেখছি। ফুটওভার ব্রিজে ভিড়, বাস স্টপেজ ছাড়া দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। তবে ফুটপাত এখনো ক্লিয়ার না। মোটরসাইকেল উঠছে, দোকানও বসেছে। এসবও মুক্ত করা দরকার।’
পল্টনে স্টপলাইন বরাবর গাড়ি থামানো এবং স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র গাড়ি থামানোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের।
পল্টর মোড়ে বাসযাত্রী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিশেষ অভিযানের কারণে বিশেষ যানজট কিংবা দীর্ঘ সিগনালও লক্ষণীয়। এটার নিরসন দরকার আছে। এত কিছু করে যদি সিগনালে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতেই হয় তবে তা অসহ্যকর।’
দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পরে তিনি ট্রাফিক সচেতনতামূলক লিফলেট, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, গাইড বই বিতরণ করেন।
সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমাদের নিজেদের জন্যই ট্রাফিক আইন মানা প্রয়োজন। দ্রুত যাবার চাইতে জীবন রক্ষা করে সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জীবনের মূল্য অনেক বেশি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশে একটা ম্যাসেজ দিতে চাই যে, কীভাবে ট্রাফিক আইন মানলে পরিস্থিতি কত স্বাচ্ছন্দ্য হয়, যাতায়াত, চলাফেরা কত আরাম ও স্বস্তিদায়ক হয়। এই জন্যই ট্রাফিক পক্ষ পালন করছি।’
সবাইকে আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রাফিক আইন মানুন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করবেন না, বেপরোয়া গাড়ি চালাবেন না। হেলেমেট ব্যবহার করুন। মোবাইলফোন খুবই গুরত্বপুর্ণ অনুষঙ্গ। কিন্তু মোবাইলফোনে কথা বলা অবস্থায় সড়ক পারাপার হবেন না ও গাড়ি চালাবেন না। নিকটের ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাসটি ব্যবহার করুন।’
অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘বর্তমান সরকার রাজধানীতে অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করছে, নতুন নতুন ফুটওভার ব্রিজ হচ্ছে, সড়ক প্রশস্ত হচ্ছে। মাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (এমআরটি) কাজ চলছে। এসব কারণে সড়কে গতিও কমেছে। যানজট সহনশীল রাখার জন্য বিরূপ আবহাওয়াতেও ট্রাফিকের সাড়ে ৪ হাজার সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব উন্নয়নমূলক কাজ শেষ হলে সড়কে যানজট থাকবে না। সড়কে শৃঙ্খলা দৃশ্যমান হবে।’
‘আমরা এবার ৫৭টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছি। ট্রাফিক সচেতনতার পাশাপাশি আইন প্রয়োগ করাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের আইন না মানার প্রবণতা বেশি। সুনাগরিক হিসেবে সবাই যদি আইন মানি তাহলেই কেবল সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব’-যোগ করেন ডিএমপি কমিশনার।
এর আগে গতবছর আগস্টে জাবালে নূরের বাস চাওয়ায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের পর তিন দফা বিশেষ অভিযান চালায় পুলিশ। এর প্রথমটি ছিল ৫ থেকে ৩১ আগস্ট, দ্বিতীয়টি ৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর এবং শেষেরটি ২৪ থেকে ৩১ অক্টোবর।
জেইউ/এসআর/এমএস