যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি : অস্বস্তিতে বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৩ এএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্র তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা কৌশলে পাশে চাইলেও বিষয়টি নিয়ে এখনো এক ধরনের অস্বস্তিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে আরও পর্যবেক্ষণ করতে চায় ঢাকা। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক সংলাপের ওপর প্রস্তুতিমূলক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজনৈতিক আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম শহীদুল হক। ২২ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড হ্যালের সঙ্গে তার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ওয়াশিংটন যাওয়ার আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সের (ওআইসি) সিনিয়র অফিসিয়াল মিটিংয়ে অংশ নেয়ার জন্য সৌদি আরব যাবেন। সেখান থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র যাবেন।

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক সংলাপের বৈঠককে কেন্দ্র করে গত রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, দু’দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জ্বালানি সহযোগিতা, মানবাধিকার, সুশাসন, রোহিঙ্গা ইস্যু, বাণিজ্য ও শ্রম ইস্যু, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা হবে।

গত ২ জানুয়ারি (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারের সঙ্গে সফরের বিষয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। আর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে ইতোমধ্যে ওয়াশিংটন গিয়েছেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, জ্বালানি খাতেই যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। তবে এর সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটিও তাদের অগ্রাধিকারে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘তবে এটি (ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি) নিয়ে বাংলাদেশের কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রফতানি থেকে শুরু করে অন্যান্য খাতেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যমত অংশীদার। ফলে তারা কোনো কর্মসূচি নিয়ে আসলে তা নাকচ করা কঠিন।’

উল্লেখ্য, ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এটি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি অংশ। এ সেন্টারে যোগ দিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে প্রস্তাবও দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল এন রোজেনব্লুম বাংলাদেশ সফরকালে এ প্রস্তাব দেন।

ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসূচিগুলোকে চীনকে এক প্রকার অবরুদ্ধ করার প্রয়াস হিসেবে বিবেচনা করছে। অন্যদিকে চীন ও বাংলাদেশের অন্যমত বন্ধু। ফলে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে কাজ করতে চাইছে বাংলাদেশ।

ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সূত্র মতে, ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি বাড়ানো। চীনকে অবরুদ্ধ করা নয়, বরং সমুদ্রে অবাধ চলাচল, নিরাপত্তা ও বাণিজ্য বাড়াতেই যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্যোগ। এ অঞ্চলে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার রয়েছে সিঙ্গাপুরে। এর মাধ্যমে সমুদ্রে চলাচলকারী সব জাহাজের তথ্য বিনিময় করা হয়, যাতে সমুদ্র যাত্রায় কোনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়।

ঠিক তারই আদলে যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরে এ সেন্টার খুলতে চায়। বাংলাদেশেরও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার হলো- জ্বালানি সরবরাহ, বাণিজ্য উন্নয়ন ও মেরিটাইমের নিরাপত্তা সহযোগিতা।

জেপি/আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।