নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন হেফাজত আমির

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৫৩ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯
ফাইল ছবি

মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে দেয়া বক্তব্যের একটি খণ্ডাংশ বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে দাবি করেছেন হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি করেন তিনি।

হাটহাজারী মাদরাসার মুখপাত্র মাসিক মুঈনুল ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক সরওয়ার কামাল প্রেরিত বিবৃতিতে আল্লামা শফি উল্লেখ করেন, ওই বক্তব্যে মূলত তিনি বলতে চেয়েছেন ইসলামের মৌলিক বিধান পর্দার লঙ্ঘন হয়, এমন প্রতিষ্ঠানে নারীদের পড়াশোনা করানো উচিত হবে না। সবার মনে রাখতে হবে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এখানে শিক্ষা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনাসহ যাবতীয় সব কিছুই রয়েছে। ইসলামে নারীদের শিক্ষার বিষয় উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সবাই অবগত যে, উম্মুল মুমিনিন হজরত মা আয়েশা (রা.) ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস। তিনি শিক্ষাগ্রহণ না করলে উম্মত অনেক হাদিস থেকে মাহরুম হয়ে যেত।

ইসলামের একটি মৌলিক বিধান হচ্ছে পর্দা উল্লেখ বিবৃতিতে তিনি বলেন, নারীদের পর্দার বিষয় ইসলামে সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। লেখাপড়া করতে গিয়ে যেন পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা না হয়। কারণ দেশের বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষাকেন্দ্রে সহশিক্ষা দেয়া হয়। সেখানে ছেলে-মেয়েরা একই সঙ্গে পড়ে। এতে করে পর্দার লঙ্ঘন হয়। এই সহশিক্ষার বিষয়েই মূলত তিনি মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছেন।

বিবৃতিতে আল্লামা শফি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাকে নারী ও নারী শিক্ষাবিদ্বেষী বলে প্রচার করছে, তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছে।

কওমিপন্থী ছয় বোর্ডের নিয়ন্ত্রণকারী হাইয়াতুল উলইয়ালিল জামিয়াতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, ওই ছয় বোর্ডের অধীনে হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সনদ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দিয়েছেন। এতে করে দেশের বিভিন্ন মাদরাসা থেকে শিক্ষার্থীরা দাওয়ারে হাদিস পাস করে মাস্টার্সের সমমান অর্জন করছেন।

তিনি বলেন, ‘যে সম্মিলিত বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে হাজার হাজার নারী রাষ্ট্র স্বীকৃত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত বলে পরিগণিত হচ্ছে, সেই বোর্ডের প্রধান হয়ে আমি কীভাবে নারী শিক্ষার বিরোধী হলাম তা বোধগম্য নয়’।

আল্লামা শফি বলেন, তিনি নারী শিক্ষার বিরোধী নন, তবে নারীদের নিরাপদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয় আগেও সতর্ক করেছেন, এখনও করছেন। নারীরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হোক, তবে সেটা অবশ্যই নিরাপদ পরিবেশে থেকে এবং ইসলামের মৌলিক বিধানকে লঙ্ঘন না করে। শিক্ষাগ্রহণ অবশ্যই জরুরি, তবে তার জন্য আমাদের কন্যাদের অনিরাপদ পরিবেশে পাঠাতে পারি না।

তিনি বলেন, ‘আমি চাই এ দেশের নারীরা শিক্ষিত হোক, কারণ মা শিক্ষিত হলেও সন্তান সঠিক শিক্ষা পাবে। নারীদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করুন। যেখানে পরিচালক থেকে শুরু করে কর্মকর্তারা সবাই নারী থাকবেন। সে ধরনের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকলে আমরা তাতে উৎসাহিত করব’।

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা শফির দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পড়ানোর আহ্বান হেফাজত আমিরের নিজস্ব অভিমত। এই বক্তব্য রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

শনিবার চট্টগ্রাম শহরের চশমাহিলের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।

নওফেল বলেন, আল্লামা শফি ব্যক্তিগত অভিমত দিয়েছেন। বাংলাদেশের শিক্ষানীতি প্রণয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা অথবা শিক্ষা খাতে কোনো নির্বাহী দায়িত্বে তিনি নেই। যেহেতু তিনি কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার অবস্থানে নেই, তাই তিনি কোনো অভিমত দিলেই সেটা রাষ্ট্রীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত বা প্রতিফলিত হবে, এমন চিন্তা করবার অবকাশ নেই।

এমএমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।