চুলা জ্বলছে না চট্টগ্রামে
শীতের তীব্রতায় চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাস প্রবাহ কমেছে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি। এর ফলে বাসাবাড়ি ও গ্যাস নির্ভর কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে চরম সঙ্কট। গত দুইদিন ধরে নগরীর বেশিরভাগ আবাসিক এলাকায় দিনের বেলা গ্যাসের চুলা জ্বলেনি। দুপুরের পর গ্যাস এলেও মধ্যরাতের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না।
প্রেসার কমে যাওয়ায় কমে গেছে গ্যাসের প্রবাহও। এতে আবাসিক এলাকাসহ পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে এখন গ্যাস সঙ্কট চলছে। সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল ১০টার পর থেকেই গ্যাসের প্রেসার একেবারে কমে আসছে। দুপুর ২টার পর আবার ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও স্বাভাবিক হয় মধ্যরাতে। ফলে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে গ্যাস নির্ভর সব কাজই বন্ধ থাকে। নগরীর ইপিজেড এবং হালিশহরের মতো ঘনবসতি এলাকায় গ্যাসের অভাব চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন পোষাক কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক ভোরে উঠে রান্না করেন। কিন্তু ভোর থেকে দুপুর চুলা না জ্বলায় তারা পড়েছেন সমস্যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে নগরের রহমতগঞ্জ, আসকার দীঘিরপাড়, বাকলিয়া, পাথরঘাটা, ঘাটফরহাদাবেগ, খুলশী, নাসিরাবাদ, মুরাদপুর, লালখানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাস থাকছে না।
নাসিরাবাদ হাউজিংয়ের বাসিন্দা হামিদা আক্তার অভিযোগ করেন, সকাল ৬টা থেকে তার বাসায় গ্যাস থাকে না। আসে দুপুর দেড়টা-দুটোর দিকে। এই সময়ে চুলায় গ্যাস একেবারেই থাকে না। ভাত রান্নাতো দূরের কথা পানিও গরম করা যায় না।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু গ্যাস থাকেই না তাই বিকল্প উপায়ে রান্নার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। অন্যবার শীতের সঙ্গে এবার শীতে গ্যাস সরবরাহে কোনও পার্থক্য দেখছিন না। এলএনজি আসলে আর কোনো সঙ্কট থাকবে না বলেও আমাদের শোনানো হয়েছিল। অথচ এখন কি হচ্ছে?’
কেবল আবাসিক এলাকাই নয়, শীতের তীব্রতা বাড়ার পর শিল্প এলাকায়ও চাপ কমে গেছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানি শিল্পে এর প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে পড়েছে। অনেক কারখানায় বয়লার ঠিকমতো কাজ করছেনা।
কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তা মোহময় দত্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমনিতে শীতকালে গ্যাসের ব্যবহার একটু বেড়ে যায়। তার ওপর কমেছে এলএনজি সরবরাহ। চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। এখানে গ্যাস দেয়া হচ্ছে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কম। এর মধ্যে আমদানিকৃত এলএনজি রয়েছে ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকিটুকু ন্যাশনাল গ্রিড থেকে দেয়া হয়। এই গ্যাসের প্রায় অর্ধেকই চলে যাচ্ছে দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র- কাফকো ও সিইউএফএলে এবং কর্ণফুলী পেপার মিলে। তাই রেশনিং করেও গ্যাস সঙ্কট কাটানো যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামনের কৃষি মৌসুমকে সামনে রেখে কাফকো এবং সিইউএফএল একই সাথে উৎপাদনে গেছে। ফলে আমদানিকৃত এলএনজির একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে সার উৎপাদনে। কাফকো এবং সিইউএফএল বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে সার উৎপাদন করছে। এ ছাড়া রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী পেপার মিলে একশ’ মিলিয়ন ঘনফুটেরও বেশি গ্যাস ব্যবহার করে। হাতে থাকা বাকি একশ মিলিয়নেরও কম গ্যাস দিয়ে চট্টগ্রামের শিল্পখাত, বানিজ্যিক খাত, ৬০টিরও বেশি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন, ছয় লাখেরও বেশি আবাসিক গ্রাহকের গ্যাসের যোগান দিতে হচ্ছে। এতে করে গ্যাসের স্বাভাবিক প্রেসার অত্যন্ত কমে গেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খায়ের আহমদ মজুমদার জানান, এলএনজি সরবরাহ না থাকায় এ সঙ্কট চলছে। ওমান এখন এলএনজি দিতে পারছে না। শুধু কাতার থেকে এখন এলএনজি আসছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এলএনজি নিয়ে চতুর্থ জাহাজটি আসার কথা রয়েছে। ওই জাহাজটি আসলে এলএনজি সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো যাবে। কাতার থেকে প্রয়োজনীয় এলএনজি না আসা পর্যন্ত এই সঙ্কট চলবে। তবে শীতের সময় গ্যাসের প্রবাহে কিছুটা সমস্যা হয়। শীত চলে গেলে সঙ্কট এত থাকবে না।
এমবিআর/এমএস