যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো ঢাবি কালো দিবস
যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস। ২০০৭ সালের ২০ থেকে ২৩ আগস্ট তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের উপর সংঘটিত অমানবিক, বেদনার্ত ও নিন্দনীয় ঘটনা স্মরণে দিবসটি পালন করা হয়।
দিবসটি পালন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের কালোব্যাজ ধারণ এবং আলোচনা সভা।
এ উপলক্ষে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যারয়ের অপরাজেয় বাংলায় ছাত্র-শিক্ষক প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় অগণতান্ত্রিক শক্তির টার্গেটে পরিণত হয়েছে। দেশে বর্তমানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। ২০০৭ সালের ২০ থেকে ২৩ আগস্ট দেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে আছে। কিন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব ঘটনার কোনো বিচার হয় না। ঢাবির ইতিহাসে আর যেন কালো দিবস ফিরে না আসে সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
কবি অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক সদরুল আমিন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, অধ্যাপক আনোয়ার হোসন প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী।
এদিকে দিবসটিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাই কালোব্যাজ ধারণ করেন। সকল বিভাগের ক্লাস বন্ধ থাকে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আলী আকবরসহ কারা নির্যাতিত ছাত্র, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি ও কারিগরী কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ২০০৭ সালের ২০ থেকে ২৩ আগস্টের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, এই চক্রই পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জননেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।
২০০৭ সালের বিভীষিকাময় দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ তখন অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা সেদিন গণতন্ত্র বিকাশের পথকে সুগম করেছিল।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে সজাগ থাকতে হবে। এসব ঘটনার পেছনের কুশীলব ও নির্দেশদাতাদের সম্পর্কেও সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ফুটবল খেলা দেখার সময় কতিপয় সেনাসদস্য ছাত্রদের মারধর করেন। এর প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ বিক্ষুদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। এ প্রেক্ষিতে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার সান্ধ্য আইন জারি করে এবং ২৩ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক এবং আটজন ছাত্রকে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালায়।
এমএইচ/বিএ