ফুটপাতে সন্তান প্রসব : মিলল বাবার খোঁজ, পুরস্কৃত সেই এসআই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৮:২৮ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০১৯
নবজাতককে কোলে নিয়ে হাসপাতালে এসআই মাসুদুর রহমান

চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে ফুটপাতে সন্তান প্রসবের ঘটনা আলোড়ন তুলেছে দেশব্যাপী। এবার পাওয়া গেল এ নবজাতকের বাবার খোঁজ। তার নাম ইসমাইল (৩৫)। পেশায় হোটেল শ্রমিক। ইসমাইল নিজেও একজন ভবঘুরে!

নবজাতকের মা মানসিক ভারসাম্যহীন রোজিনা জানান, কয়েক বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তার স্বামীর নাম ইসমাইল। তিনি হোটেলে কাজ করেন। তার ভরণপোষণা না দেয়ায় তিনি স্বামীকে ছেড়ে দিয়েছেন।

তবে স্বামী ইসমাইলের দাবি, ২০০১ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের একটি ছেলে সন্তান আছে। কিন্তু বিয়ের পরে তার স্ত্রী রোজিনার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর থেকে তিনি বাসায় থাকেন না। বাসার সবকিছু তছনছ করে রাস্তায় চলে আসেন। কিছু দিন আগেও নিজে হোটেল শ্রমিক হিসেবে কাজের পাশাপাশি নিজেদের জন্য নগরের ধোপার দীঘির পাড় এলাকায় বাসা নিয়েছিলেন। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন রোজিনা বারবার বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এ কারণে তাদের ভাড়া বাসা থেকে বের করে দেন বাড়ির মালিক।

ইসমাইল বলেন, ‘বারবার বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় রোজিনাকে রাতবিরাতে রাস্তা থেকে খুঁজে আনতে হয়। গত তিন মাস আগে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর রোজিনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া যায়নি। এদিকে বাড়ির মালিক বাসা ছেড়ে দিতে বলায় নিজেও এখন স্থানীয় ল্যাঙটা ফকিরের মাজারে সন্তান নিয়ে থাকি।’

ctg2

নবজাতকের বাবা উনি। তার নাম ইসমাইল (৩৫)। পেশায় হোটেল শ্রমিক

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রোজিনা ইসমাইলের স্ত্রী। কিন্তু স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাকে কেউ বাসা ভাড়া দেন না। এ ছাড়া রোজিনাও বাসায় না থেকে রাস্তায় চলে আসেন। ইসমাইল বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীকে খুঁজে নিয়ে বাসায় নিয়ে গেলেও তাকে সেখানে রাখা সম্ভব হয় না। কিছুদিন আগে রোজিনা তাদের ভাড়া বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে ইসমাইল তার ছেলে সন্তান নিয়ে ল্যাঙটা ফকিরের মাজারে গিয়ে ওঠেন।

এদিকে নবজাতক ও প্রসূতির প্রাণ বাঁচানো উপ-পরিদর্শক (এস আই) মাসুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সোমবার সন্ধ্যার একটু পর আমার দুই কলিগ (সহকর্মী) ও স্থানীয়দের কাছে পাগলীর ফুটপাতে সন্তান প্রসবের খবর পাই। দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে দেখি হৃদয়বিদারক এক দৃশ্য। সঙ্গে সঙ্গে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়ে মা ও শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছেন, হাসপাতালে নিতে যদি আধাঘণ্টা দেরি হত শিশুটির প্রাণ বাঁচানো যেত না। এরই মধ্যে শিশুটি তার মায়ের মল খেয়ে ফেলেছিল। এ সময় চিকিৎসকরা দ্রুত ওয়াশ করে, আল্লাহর রহমতে শিশুর প্রাণ রক্ষা হয়।’

শুধু নবজাতক ও মাকে উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হননি মাসুদুর রহমান। এখন নিয়মিত হাসপাতালে দেখাশোনাও করছেন তিনি। মা ও শিশুর জন্য এনে দিয়েছেন নতুন কাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

ctg2

ফুটপাতে পড়ে থাকা মা ও শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এসআই মাসুদুর রহমান মানবিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার পেলেন

আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) আশরাফুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘নবজাতক ও তার মাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন দু’জনের অবস্থাই ছিল খুব সঙ্কটাপন্ন। সঠিক সময়ে তাদের নিয়ে না আসা হলে খারাপ কিছু ঘটতে পারত। এখন তারা দুজনেই ভালো আছে। আপাতত শিশুকে হাসপাতালেই দেখাশোনা করা হবে।

এদিকে ভালো কাজের জন্য এসআই মো.মাসুদুর রহমানকে পুরস্কৃত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাহবুবুর রহমান। বুধবার (৯ জানুয়ারি) দামপাড়া পুলিশলাইনে পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে মানবিক কাজের জন্য মাসুদুর রহমানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৭ জানুয়ারি) শীতের সন্ধ্যায় গ্রামীণ ফোন সেন্টারের সামনে ফুটপাতে নালার পাশে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী জন্ম দেন ফুটফুটে এক শিশুর। এ ঘটনা দেখে আশপাশে মানুষ ভিড় করলেও এগিয়ে আসেননি কেউ। অথচ মায়ের নাড়িতে জড়িয়ে থাকা শিশুটি গড়াগড়ি দিচ্ছিল ফুটপাতের ধুলোয়। লোকমুখে সে খবর পেয়ে ছুটে আসেন দেওয়ানহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই ) মাসুদুর রহমান। অন্যদের মতো দর্শকের ভূমিকা না নিয়ে ফুটপাতে পড়ে থাকা মা ও শিশুকে দ্রুত নিয়ে যান হাসপাতালে। সেখানে কাটা হয় নাড়ি। ফলে প্রাণে বেঁচে যায় মা ও শিশু।

আবু আজাদ/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।