৩ তলা থেকে ফেলে হত্যা : বাবার বিরুদ্ধে মেয়ের জবানবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৬ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০১৯

গেন্ডারিয়ায় প্রতিবেশীর আড়াই বছরের শিশু আয়েশাকে বাড়ির তিন তলার বারান্দা থেকে ফেলে হত্যার ঘটনায় বাবার বিরুদ্ধে আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছে মেয়ে।

ঘটনাটি গত ৫ জানুয়ারির। গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের একটি টিনশেড বাড়িতে বাবা-মা ও বোনদের সঙ্গে থাকতো আড়াই বছরের শিশু আয়েশা। প্রতিদিন সকালে আয়েশার মা-বাবা কাজে যান। দিনের বিভিন্ন সময় গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয়ের সামনের গলিতে খেলা করতো শিশু আয়েশা।

শনিবার বিকেলে খেলছিল আয়েশা। সন্ধ্যার দিকে টিনশেড বস্তির পাশের চারতলা বাড়ির সামনে আয়েশার রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। এলাকায় জানাজানি হয় মেয়েটি বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে মারা গেছে।

তবে এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে আয়েশার বাবা ইদ্রিস আলী বাদী হয়ে প্রতিবেশী নাহিদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা’ মামলা করে। মামলায় ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ অভিযোগ আনা হয়।

তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে নাহিদকে (৪৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে সেখানেও ছিল নাটকীয়তা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নাহিদ বাসার তৃতীয় তলার খোলা জানালা দিয়ে লাফ দেয়। এতে তার দুই পা ভেঙে যায়। এ সময় আহত অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। নেয়া হয় আদালতে।

এরপরই উন্মোচিত হয় নাহিদের কুকর্ম। মঙ্গলবার স্বেচ্ছায় আদালতে আসে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া নাহিদের মেয়ে বুশরা। নিজের বাবার কুকর্মের কথা তুলে ধরে আদালতে জবানবন্দি দেয় সে।

আদালতে বুশরা জানায়, ঘটনার দিন শনিবার সন্ধ্যার দিকে বাসার বারান্দায় বসে ছিল বুশরা। এমন সময় বাবা নাহিদের রুম থেকে ছোট শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় সে। কান্না শুনে সে বাবার বেডরুমে যায়। দরজা খুলে দেখে, তার বাবা বিছানায় আর শিশু আয়েশা তার কোলে কাঁদছে।

তখন বাবা নাহিদ বুশরাকে ধমক দিয়ে বলে, ‘এই তুই এখানে এসেছিস কেন? তখন বুশরা অন্য রুমে চলে যায়। এরপর নাহিদ শিশু আয়েশাকে তিন তলার খোলা জানালা দিয়ে ফেলে দেয়।’

বুধবার (৯ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রতিবেশী শিশু আয়েশাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাসায় ডেকে নেয় নাহিদ। পরে তাকে তিন তলা থেকে ফেলে হত্যা করে। তাকে এর বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করা সম্ভব হয়নি, কারণ সে অনেক বেশি অসুস্থ।

ডিসি বলেন, বিকৃত মানসিকতা ও মাদকাসক্ত এবং সামাজিক অবক্ষয় এর অন্যতম কারণ। আর যেসব জায়গায় এসব ঘটনা ঘটছে সেখানে অভিভাবকরা একটু কম সচেতন।

৫ বছর আগে নাহিদের স্ত্রী মারা যায়। এরপর তিনি আর বিয়ে করেননি। ১২ বছরের মেয়েকে নিয়ে নাহিদ ওই বাসায় থাকতেন। বর্তমানে গুরুতর আহত নাহিদ গ্রেফতার অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এএসএস/এআর/এএইচ/এমএস/এসজি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।