কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, শিশুর মৃত্যু
ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার ৬০ ইউনিয়নের সোয়া লাখ মানুষ। রোববার দুপুরে চিলমারী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে সাদিয়া (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ জনে।
জানা গেছে, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। বসতভিটা ও গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বানভাসী মানুষজন গবাদি পশু নিয়ে পাকা সড়ক, বাঁধ ও উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারি ও বে-সরকারি পর্যায়ে বানভাসিদের মাঝে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি। ফলে বানভাসিদের মাঝে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল এখন পানির নিচে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ফারাজী পাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল, আবেদ আলী ও আব্দুর রহিম জানান, গত ৪ দিন ধরে পানি বাড়ছে। চকির উপর পানি উঠেছে। বাধ্য হয়ে রোববার ঘর-বাড়ি ছেড়ে পাকা সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
একই এলাকার জমিলা বেগম জানান, বাড়ি ছেড়ে ছেলে-মেয়ে,গরু-ছাগল নিয়ে পাকা সড়কে ধাপরী ঘরে আছি। খাওয়া-দাওয়ার খুব কষ্ট। চেয়ারম্যান-মেম্বার কোনো খোঁজ নেয় না।
চিলমারী উপজেলার মানুষ মারার চরের বাসিন্দা মানিক জানান, গরু-ছাগলসহ বাড়ির সবাইকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ রাস্তায় পাঠিয়েছি। এখানে শুধু বাড়ি-ঘর পাহারা দেয়ার জন্য নৌকা নিয়ে বসে আছি।
সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের পাঁচগাছী গ্রামের সুফিয়া বেগম কোমর পানি ভেঙে রাস্তা পার হয়ে এসে জানান, বাড়িতে পানি উঠলেও কোনো রকমে ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখানে আছেন। রান্না করতে পারছেন না। তাই কোমর পানি ভেঙে পাকা সড়কে এসেছেন দোকান থেকে শুকনো খাবার নিতে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমির হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরকারি বা বে-সরকারিভাবে এ সকল মানুষের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমীন জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য ৮০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা দ্রুত বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এছাড়াও নতুন নতুন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শওকত আলী সরকার জানান, প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন প্রকার ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে নুনখাওয়া পয়েন্টে দুধকুমার নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।
নাজমুল হোসেন/এসএস/পিআর