মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ নিয়ে শঙ্কা
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে কর্মী নেয়ার ঘোষণার আগেই কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের লবিং ও তৎপরতার কারণে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামী তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নেয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরের কথাও রয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
কিন্তু এসব তৎপরতায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। শুধু সংশ্লিষ্টরাই নয় প্রবাসীরাও হতাশায় পড়েছেন। শ্রমবাজার রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা।
গত শুক্রবার বিকেলে কুয়ালালামপুরে হোটেল পালিতায় আয়োজিত শ্রম বিষয়ক শীর্ষক আলোচনা সভায় কমিউনিটির নেতারা এ আহ্বান জানান। কমিউনিটি নেতারা বলেন, কিছু কুচক্রীমহল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধীর জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নষ্টের ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া যাবে না।
কমিউনিটি নেতারা আরো বলেন, কোন সিন্ডিকেট নয় কম খরচে কিভাবে বাংলাদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় আসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ দিকে বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে স্বাগত জানাবে সরকার। তবে কর্মী নিয়োগে সব ধরনের সিন্ডিকেশনকে জিরো টলারেন্স দেখাবে সরকার।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দু’দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি না হলেও ইতিমধ্যে একটি সিন্ডিকেট মালয়েশিয়া গিয়ে সে দেশের নিয়োগকারী সংস্থাদের কাছ থেকে ভিসা কিনে তা দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে বিক্রি শুরু করেছে। কেউ কেউ ভিসা ক্রয়ের জন্য মালয়েশিয়ায় দালালও নিয়োগ করে ফেলেছে। মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গত ২৫ জুন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সেক্টরে মালয়েশিয়া ৫ লাখ কর্মী নেবে বলে জানানোর পর থেকেই মূলত এই সিন্ডিকেটের ভিসা কেনাবেচার তৎপরতা শুরু হয়।
এক পর্যায়ে গত জুনের শেষদিকে জনশক্তি রফতানিকারকের সংগঠন বায়রা’র পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে মালয়েশিয়াস্থ ‘রিয়েল টাইম নেটওয়ার্কিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব করা পদ্ধতি ‘ওয়ার্কফোর্স ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মনিটরিং সিস্টেম’ অনুসরণের সুপারিশ করে বায়রা।
প্রসঙ্গত এই ‘রিয়েল টাইম নেটওয়ার্কিং’ এর মালিক একজন বাংলাদেশি জনশক্তি রফতানিকারক। একটি সূত্রে জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক চুক্তির আগে বায়রার এই চিঠিতে মালয়েশিয়া সরকার ক্ষুব্ধ হয়েছে। আর এ কারণেই মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বায়রা’র এক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ প্রতিবেদককে বলেন, চিঠিতে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা সুপারিশ করিনি। একটি মহল এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার সিন্ডিকেট মুক্ত করতেই ওই চিঠি দেয়া হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি পর্যায়ে লোক পাঠানোর পদ্ধতিকে ভালো হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে এক্ষেত্রে সাধারণ শ্রমিকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারণার শিকার না হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানা গেছে, রিক্রুটিং এজেন্টরা লোক নিয়োগ করলেও পুরো ব্যবস্থা সরকার মনিটরিং করবে যাতে কোনো অনিয়ম না হয়। সরকারি পর্যায়ে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট-জিটুজি পদ্ধতি ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে ফের বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হতে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হাই কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে শোষণ-বঞ্চনামুক্ত পদ্ধতির প্রতি তারা জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, অবশ্যই অভিবাসন ব্যয় গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যে হতে হবে। কর্মীদের কল্যাণ ও নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই নিয়োগকারীকে গ্যারান্টি দিতে হবে। স্বচ্ছতার জন্য বর্তমান ডাটাবেস থেকে বাছাই করে নিবন্ধনকৃত কর্মী নিয়োগ করতে হবে।
এদিকে বিভিন্ন মহলের এ ধরনের তৎপরতার খবরে হতাশ মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহী কর্মীরা। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক মাস আগে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার হিড়িক পড়ে। অনেক বাংলাদেশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাওয়ার সময় সাগরে, বনে-জঙ্গলে জীবন দিয়েছে। এরপর বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ার শ্রমিক নেয়ার খবর অনেকটাই স্বস্তি এনেছিলো।
কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী নেয়ার আগেই বিভিন্ন মহলের এই তৎপরতা হতাশাজনক। আর কর্মী প্রেরণ প্রক্রিয়া কুক্ষিগত হলে অভিবাসন খরচও অনেকাংশে বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
এসএইচএস/পিআর