আজ ২৩ আগস্ট : ইতিহাসের এক ঘৃণ্য অধ্যায়


প্রকাশিত: ০৮:৩৫ পিএম, ২২ আগস্ট ২০১৫
ফাইল ছবি

দেখতে দেখতেই পার হয়ে গেছে আটটি বছর। আজ ২৩ আগস্ট ২০১৫ রোববার। ২০০৭ সালের ২০ থেকে ২৩ আগস্ট প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেমে আসে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্মম নির্যাতন। যেই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের। বাদ পড়েননি জাতির বিবেক খ্যাত দেশ সেরা শিক্ষালয়টির শিক্ষকরাও। সেই দিনের হৃদয়বিদারক ঘটনাকে স্মরণ করে পরবর্তী বছর থেকে এই দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার পালন করে আসছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস’ হিসেবে।

কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তুচ্ছ ঘটনাকে পুঁজি করেই শিক্ষার্থীদের ওপর সেদিন নির্যতন করে সেনাবাহিনী। মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ওপর সেনাবাহিনীর হাত তোলার উপযুক্ত বিচারের দাবিতে ফুঁসে ওঠে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। অন্যদিকে খেলার মাঠের পর সেনাবাহিনী সেই নির্যাতনের কাহিনী চালাতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
২০০৭ সালের ২০ আগস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে চলছিল আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলা। মাঠের পাশেই ছিল সেনাবাহিনীর অস্থায়ী সেনাক্যাম্প। সেখানকার সেনা সদস্যরা খেলার মাঠে ঢুকে গ্যালারিতে বসার চেষ্টা করে। পরে তাদের বসা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেনা সদস্যের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সশস্ত্র সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ওপর সেনাবাহিনীর হাত তোলার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীরাও। বেধে যায় তুমুল সংঘর্ষ।

সংঘর্ষের প্রতিবাদ আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে সেনা শাসন চালানোর ক্ষোভে ঢাবির ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আন্দোলনে নামেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরাও। বিক্ষোভের ছোঁয়া লাগে দেশের অন্যান্য জেলা শহরেও। সারাদেশে আহত হয় প্রায় শতাধিক বিক্ষোভকারী। এছাড়াও রাজশাহীতে এক রিকশাচালক নিহত হন। পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে ২২ আগস্ট সরকার দেশের ছয়টি বিভাগীয় শহরে কারফিউ জারি করে। এ সময় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যা দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ রাখা হয়।

অন্যদিকে বিক্ষোভে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ এনে ২৩ আগস্ট সেনাসমর্থিত সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, সাবেক কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন ও অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকসহ ঢাবির চার শিক্ষক ও সাত ছাত্রকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাদের পাঠানো হয় কারাগারে এবং বিভিন্ন মেয়াদে এই শিক্ষকদের কারা ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আটক আট শিক্ষকের মধ্যে দুই শিক্ষক ও এক কর্মকর্তাকে কারাদণ্ড দেয় সরকার। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো সাত ছাত্রকেও জেল খাটতে হয়। ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনায় পরবর্তীকালে মোট ৬৬টি মামলা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৩টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। ১৬টি মামলা সরকার প্রত্যাহার করে নেয় এবং সাতটি মামলা আদালত খারিজ করে দেন।

সেই দিনের ঘটনার শিকার ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক এরশাদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী সেই দিন খেলার মাঠে আমাদের ওপর নির্যতন করেছিল। ঘটনার জানাজানি হলে পরবর্তীতে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে সেনাবাহিনী আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অন্যদিকে আমরাও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ শিক্ষার্থীদের মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলন করি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিকালে অতীতে যেভাবে নিজেদের দেশের স্বার্থে কাজ করিয়েছিল এবারো তার ব্যত্যয় ঘটেনি। দীর্ঘদিন যাবৎ নিজেদের অবস্থান পাকা করে রাখা সেই সেনা সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে ওঠে ওই দিন বিকেলেই। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এক পর্যায়ে আমরা আমাদের হলে এসে অবস্থান নিলে তারা সেখানেও হামলা করে। পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। আমরা সারারাত আগুন জ্বালিয়ে চোখের জ্বালা থেকে রক্ষা পায়। পরবর্তীতে ঘটনা কঠিন পর্যায়ে পৌঁছালে আমরা হলের তৎকালীন প্রাধ্যক্ষের কক্ষে ভাঙচুর করি। ওই ঘটনায় একটি মামলা হলেও ছোট থাকার কারণে আমরা মামলার আসামি হওয়া থেকে বেঁচে যাই। কিন্তু আমাদের নাজমুল ভাইসহ (সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক) অনেকে ওই মামলার আসামি হন।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটি হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সবচেয়ে বড় একটি কালো অধ্যায়। সেই সঙ্গে আমরা প্রমাণ করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখনই কারো বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তখনই তার পতন হয়েছে। সেই দিন যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই আন্দোলনের সূত্রপাত না হতো তাহলে হয়তো আজো আমাদের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরাকারের অধীনে থাকতে হতো।’

ওই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে করা মামলাগুলোর শেষ নিষ্পত্তি না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ওই মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। সেদিন আমরা কি-না সহ্য করতে হয়েছে। আমাদের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষকদেরও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আমি দ্রুত মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হওয়ার দাবি জানাই।’

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কর্মসূচি
এই দিকে ২০০৮ সাল থেকে পালন করে আসা ২৩ আগস্ট কালো দিবসটি এ বছর পা রাখছে অষ্টম বছরে। বরাবরের মতো এবেরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এই দিনটিকে ঘিরে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের কালো ব্যাজ ধারণ, সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ক্লাসসমূহ স্থগিত রাখা এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা।

এমএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।