চট্টগ্রামে বিশেষ কেন্দ্র ৭৯, ঝুঁকিপূর্ণ ১০৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১২:০৮ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম জেলা ও নগরের এক হাজার ৮৯৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে এক হাজার ৩২টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ ও দ্বীপাঞ্চলের ৭৯টি কেন্দ্রকে বিশেষ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার জামায়াত অধ্যুষিত সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী ও সীতাকুণ্ডের কেন্দ্রগুলোকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

অতীতের সংঘাত, ব্যালটবাক্স ছিনতাই, কেন্দ্রে প্রার্থীদের প্রভাব ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ তালিকা করেছে পুলিশ। অবশ্য পুলিশ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র না বলে এসব কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহানগরী বাদে চট্টগ্রাম জেলায় ভোটকেন্দ্র এক হাজার ৩০২টি। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ (পুলিশের ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ৮৩২টি। দ্বীপাঞ্চলের ৭৯টি কেন্দ্রকে বিশেষ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া ৩৯১টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

11th-national-election-22.jpg

এর মধ্যে সাতকানিয়া থানা এলাকায় ৮৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬৬টি ও সাধারণ ২২টি, লোহাগাড়া থানায় ৫৯টি কেন্দ্রের সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ, বাঁশখালী উপজেলায় মোট ভোটকেন্দ্র আছে ১১০টি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৭৮টি ও সাধারণ ৩২টি কেন্দ্র আছে। সীতাকুণ্ডে ভোটকেন্দ্র আছে ৮০টি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬৩টি ও সাধারণ ১৭টি কেন্দ্র আছে।

মিরসরাই থানায় ৩৪টি গুরুত্বপূর্ণ ও ১৫টি সাধারণ, জোরারগঞ্জ থানায় ৫২টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৩টি সাধারণ, ফটিকছড়ি থানায় ৭৮টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৯টি সাধারণ, ভুজপুর থানায় ৪৪টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৫টি সাধারণ, সন্দ্বীপ থানায় ২৯টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৫০টি সাধারণ, হাটহাজারী থানায় ৭৩টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৩৩টি সাধারণ, রাউজান থানায় ২১টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৬৩টি সাধারণ, রাঙ্গুনিয়া থানায় ৬০টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২৮টি সাধারণ, বোয়ালখালী থানায় ৪১টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৩৬টি সাধারণ, পটিয়া থানায় ৪২টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৬৯টি সাধারণ, আনোয়ারা থানায় ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৩৪টি সাধারণ, চন্দনাইশ থানায় ৫৮টি গুরুত্বপূর্ণ ও ১০টি সাধারণ এবং আসন হিসেবে চন্দনাইশের সঙ্গে সংযুক্ত সাতকানিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৩৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৬টিকে গুরুত্বপূর্ণ ও ১০টিকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।

11th-national-election-22.jpg

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা জাগো নিউজকে বলেন, ‘অতীতের সংঘাত, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, কেন্দ্রে প্রার্থীদের প্রভাব ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জেলার বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে পুলিশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

এদিকে নগর পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৫৯৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২০০টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে সিএমপি। আর ৩৯৭ কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করছে।

নগরীর কোতোয়ালী থানায় ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৪৫টি সাধারণ ভোটকেন্দ্র, চকবাজার থানায় ৭টি গুরুত্বপূর্ণ ও ১৩টি সাধারণ কেন্দ্র, বাকলিয়া এলাকায় ১১টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২৮টি সাধারণ, সদরঘাট থানার ৯টি গুরুত্বপূর্ণ ও ১৬টি সাধারণ কেন্দ্র, চান্দগাঁও থানায় ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৩৬টি সাধারণ কেন্দ্র, পাঁচলাইশ থানায় ২৪টি সাধারণ ও ৯টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ১২টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৩৭টি সাধারণ কেন্দ্র, খুলশী থানায় ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২৪টি সাধারণ, ডবলমুরিং থানায় ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৩১টি সাধারণ কেন্দ্র, হালিশহর থানায় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২০টি সাধারণ কেন্দ্র, পাহাড়তলী থানায় ১১টি গুরুত্বপূর্ণ ও ১৫টি সাধারণ, আকবর শাহ থানায় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ও ১৩টি সাধারণ কেন্দ্র, বন্দর থানায় ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২৮টি সাধারণ, ইপিজেড থানায় ১২টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২২টি সাধারণ কেন্দ্র, পতেঙ্গা থানায় ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ও ১৯টি সাধারণ কেন্দ্র এবং কর্ণফুলী থানায় ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২৬টি সাধারণ ভোটকেন্দ্র আছে।

11th-national-election

চট্টগ্রামের নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পাঁচস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় সাধারণ এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকা এবং উপকূলীয়, দুর্গম ও পার্বত্য এলাকার ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য পৃথক পৃথক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।

অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল জানান, পাঁচস্তরের মধ্যে প্রথম স্তরে একজন এএসআই, দুইজন কনস্টেবল ও ১০ জন আনসার, গ্রাম পুলিশ থাকবে। দ্বিতীয় স্তরে একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে মোবাইল টিম থাকবে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভাভিত্তিক। তৃতীয় স্তরে থাকবে পরিদর্শক, সহকারী পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের সমন্বয়ে গঠিত স্ট্রাইকিং রিজার্ভ টিম ও তদারকি টিম। চতুর্থ স্তরে বিজিবি ও কোস্টগার্ড এবং পঞ্চম স্তরে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী টহলের দায়িত্বে থাকবে।

11th-national-election

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রামে নিয়মিত টহল কার্যক্রম শুরু করছে সেনাবাহিনী। সরেজমিনে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর সদস্যরা জিইসি মোড়, ওয়াসা, কাজীর দেউড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যানবাহনের লাইসেন্স চেক করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিরাপত্তাসংক্রান্ত তল্লাশি কার্যক্রম চালান। সন্দেহ হলে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করেন। সেনাবাহিনীর থেকে এটিকে নির্বাচনপূর্ববর্তী নিরাপত্তাসংক্রান্ত সাধারণ তল্লাশি ও চেকপোস্ট বলা হচ্ছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও মানব বিপর্যয়ের যেকোনো ঘটনা তাৎক্ষণিক মোকাবেলায় চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ৪৯টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে অবস্থান নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। নির্বাচনের মাঠে এবারই প্রথম সরাসরি অংশ নিচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৮০০ সদস্য।

11th-national-election

এদিকে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম করে তোলা হয়েছে চট্টগ্রামের সব সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ও চট্টগ্রাম উপ-পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদফতর কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরি বিভাগে জনবল তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে।

আবু আজাদ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।