নির্বাচন ঘিরে ব্যাচেলর বাসা-মেসে নজরদারি

জসীম উদ্দীন
জসীম উদ্দীন জসীম উদ্দীন , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২৬ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজধানীর ব্যাচেলর বাসা-মেসসহ ভাসমান বাসিন্দাদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। বেশ কয়েকটি স্থানে ভোটার নন, ভাসমান, ব্যাচেলর এমন বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, নাশকতা পরিকল্পনা ও দেশকে অস্থিতিশীল করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

রাজধানীর একাধিক এলাকার ব্যাচেলর বাসা ও মেস মালিকরা জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার অজুহাতে ভোটের আগের দিন, ভোটের দিন ও ভোটের পরের দিন মেস ও ব্যাচেলর বাসা ফাঁকা রাখতে বলা হয়েছে। এই ধরনের নির্দেশের কারণে তারা বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নজরদারি করা হবে, তবে এলাকা ফাঁকা করে চলে যেতে বলার কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকার দক্ষিণ পাইকপাড়ার ১০ নং সড়কের এক বাসা মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার বাসায় ব্যাচেলর রয়েছে। তাদেরকে নির্বাচনের দিনসহ তিন দিন এলাকা ছেড়ে থাকার কথা বলা হয়েছে। পুলিশ বলছে- নিরাপত্তার স্বার্থে না কি এমন নির্দেশনা।’

মিরপুর পীরেরবাগ এলাকার একাধিক মেসের ছাত্র ও চাকরিজীবীরা জানান, মেসে এসে মালিক বলে গেছে নির্বাচনকালে তিন দিন মেসে থাকা যাবে না। পুলিশ না কি থাকতে নিষেধ করেছে। এই সংবাদে বেশ কয়েকজন ছাত্র চলেও গেছে।

আল আমিন নামে একজন মেস বাসিন্দা জানান, আমরা কয়েকজন চাকরিজীবী রয়ে গেছি। সবাই চলে গেছে। জানি না আমাদের কী হবে! চাকরির কারণে থাকতে হচ্ছে।

আনসারুল ইসলাম বিকো নামে দারুসসালাম এলাকার ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশের খুব কড়াকড়ি। প্রতিদিন কোনো না কোনো সময় এসে জিজ্ঞাসা করছে। খোঁজ খবর নিচ্ছে। কখন কোথায় যাই না যাই, কখন ফিরি। চাকরি করি, বন্ধুবান্ধবরা আসে আড্ডা দিই। গতরাতে পুলিশি নিরাপত্তা অজুহাত শুনিয়ে মালিক অনুরোধ করে গেছে- নির্বাচনের ২/৩ দিন পর পর্যন্ত যেন আর কাউকে বাসায় আনা না হয়।

এ ব্যাপারে মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দাদন ফকির জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের নাশকতা না হয়, দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা না সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সন্দেহজনক এলাকাগুলোর ব্যাচেলর বাসা ও মেসের বাসিন্দা এবং ভাসমান লোক যারা এই এলাকার ভোটার নন তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।’

পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এ ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে ব্যাচেলর ও মেসের বাসিন্দা এবং নন-ভোটার ভাসমান বাসিন্দাদের নিরাপত্তাজনিত কারণে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’

মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীরও একই ধরনের তথ্য জানান।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘নন-ভোটারদের তেজগাঁও এলাকা ছাড়ার কোনো নির্দেশনা আমি দিইনি।’

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার(ডিবি) মাহবুব আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘নন-ভোটার, ভাসমান বাসিন্দা কিংবা ব্যালেচর কিংবা মেসের কোনো বাসিন্দাকে এলাকা ছেড়ে চলে যাবার মতো কোনো নির্দেশনা ডিএমপি থেকে দেয়া হয়নি। এটা করাও কঠিন। কারণ অসংখ্য মানুষ আছেন যারা এলাকায় ভোটার কিন্তু ঢাকা ছেড়ে যাবার কোনো সুযোগ নেই। তবে নিরাপত্তা হেতু নজরদারি তো থাকাই দরকার।’

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘নির্বাচনকালে যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক থাকে সেজন্য সব ধরনের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা পুলিশ গ্রহণ করেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আরও অনেক কিছুই করা হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত রাজধানীর ব্যাচেলর বাসা-মেসসহ নন-ভোটার ভাসমান বাসিন্দাদের সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবুও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানানো হবে।’

জেইউ/এমবিআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।