মুক্তিযুদ্ধে নিহত ১২ ভারতীয় সেনার পরিবারকে সম্মাননা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ১২ জন ভারতীয় সেনার পরিবারকে হাতে সম্মাননা দিয়েছে সরকার। রোববার ভারতের ফোর্ট উইলিয়ামে ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক তাদের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন। খবর সংবাদ প্রতিদিন
পরে মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি এদিন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ১২ জন ভারতীয় সেনার পরিবারের হাতে সন্মাননা তুলে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭ জন সেনাবাহিনীর, ২ জন বিমান বাহিনীর, নৌ বাহিনীর একজন ও বিএসএফের সদস্য ২ জন।
এই ১২ সেনার মধ্যে তিন জন হলেন- ফ্লাইট সার্জেন্ট হিমাংশু ঠাকুর, সিপাহি জ্ঞানচাঁদ ও নৌ বাহিনীর পেটি অফিসার শিবধর তিওয়ারি। তারা সবাই বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে প্রাণ দিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানে সম্মাননা হাতে নিয়ে হিমাংশু ঠাকুরের মেয়ে মৌসুমি জানান, বাবার কথা ভাল করে মনে নেই তার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যখন হিমাংশু ঠাকুরকে বহনকারী হেলিকপ্টার আসমের মোহনবাড়ির কাছে ভেঙে পড়েছিল, তখন মৌসুমির বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর।
অপরদিকে নাতির কাঁধে ভর দিয়ে সম্মাননা নিতে এসেছিলেন জ্ঞানচাঁদের স্ত্রী প্রেমাবতী দেবী। সম্মাননা হাতে নিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে জানান, তিনি শুনেছিলেন বাংলাদেশের আতাপুরে তার স্বামী ছিলেন পাক সেনাদের বাঙ্কারের অদূরে। সে সময় বাঙ্কার থেকে ভারী মেশিনগান দিয়ে গুলি করছিল পাক সেনারা। মুত্যু হতে পারে জেনেও হালকা মেশিনগান নিয়েই হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যান জ্ঞানচাঁদ।
এ সময় পাক সেনাদের মেশিনগানের বুলেট ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল তার দেহকে। কিন্তু মৃত্যুর আগে তার হালকা মেশিনগানের গুলিতে মারা যায় ৫ পাক সেনা।
অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রাপ্ত আরেক নিহতের স্ত্রী অপর্ণা দেবী জানান, যেদিন তার স্বামী শিবধর তিওয়ারি ছিলেন এনসিসি ক্যাডেট। সরকারের নির্দেশে স্ত্রী ও বালক পুত্রকে বারাণসীতে রেখে পেটি অফিসার হয়ে যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় নৌসেনায়। বিশাখাপত্তনম ছেড়ে তাদের যুদ্ধজাহাজ রওনা হয়েছিল বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার দিকে। কিন্তু তার আগেই ধ্বংস হয়ে যায় সেই জাহাজ। শহিদ হন শিবধর।
তিনি আরও জানান, এরপর স্বামীর মৃতদেহ আনতে যেতে পারেননি, গিয়েছিল তারা বালক পুত্র। পরে সেই ছেলেকেও হারিয়েছেন। সম্বল বলতে এখন আছে শুধুই নাতি।
এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে ফোর্ট উইলিয়ামের বিজয় স্মারকে ফুল দিয়ে শহিদদের সম্মান জানান ইস্টার্ন কমান্ডের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম এম নারাভান। এ সময় সেনা নৌ ও বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ অন্যান্য কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য এর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ভারতীয় শহিদদের পরিবারের হাতে সন্মাননা তুলে দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন এর পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, মুক্তিযুদ্ধে নিহত অন্যদের পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হবে সম্মাননা। বাংলাদেশে ১০ একর জমির ওপর মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের স্মারক স্তম্ভ তৈরি করা হবে।
এমএমজেড/পিআর