ফাঁকা ঢাকায় ‘উটকো ঝামেলা’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৩৩ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

মহান বিজয় দিবসের ছুটি মিলিয়ে টানা তিনদিনের ছুটি পেয়েছেন চাকরিজীবীরা। এতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায় ব্যস্ততম নগরী ঢাকা। শুক্র ও শনিবারের মতো রোববারও সকাল থেকেই অনেকটাই ফাঁকাই ছিল রাজধানীর সব অঞ্চল।

সাধারণ মানুষের চলাচল যেমন কম ছিল, তেমনি সীমিত আকারে চলেছে গণপরিবহন। রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এমনকি ব্যক্তিগত গণপরিবহনেরও আধিক্য দেখা যায়নি। তবে মানুষের চলাচল সীমিত থাকায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতে পড়তে হয়নি পরিবহনে ওঠার বিড়ম্বনায়।

ফলে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে পেরেছেন নগরবাসী। তবে মতিঝিল, কাকরাইল, পল্টন অঞ্চলে হেঁটে চলাচলকারী সাধারণ মানুষদের মধ্যে কাউকে কাউকে পড়তে হয়েছে ‘উটকো ঝামেলায়’।

একদল বেদে হঠাৎ পথচারীদের ঘিরে ধরে হাতে ধরা একটি কৌটা বাড়িয়ে টাকা চাওয়ার কারণে এ উটকো ঝামেলা দেখা দেয়। দুপুর থেকে ৬-৭ জনের এ বেদে কন্যার দলকে মতিঝিল, কাকরাইল ও পল্টন এলাকার পথচারীদের কাছে টাকা চাইতে দেখা যায়।

dhaka-faka

কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড়ে দুপুর ১টার দিকে সুমন নামে এক পথচারীকে ঘিরে ধরেন তিনজন বেদে কন্যা। তাদের মধ্যে বয়সী একজন মেয়ের বিয়ের কথা বলে সুমনের কাছে ৫০ টাকা চেয়ে বসেন।

এতে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে পকেট থেকে ১০ টাকা বের করে দিতে যান তিনি। কিন্তু তাতে খুশি হতে পারেননি বেদে কন্যারা। তারা আরও টাকা দাবি করেন। এক পর্যায়ে কিছু বাকবিতণ্ডার পর ৩০ টাকা দিয়ে রক্ষা পান সুমন।

বেদে কন্যারা চলে যাওয়ার পর সুমন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভাই, এ তো দেখি মহাবিপদ। টাকা না দিলে সাপের বাক্স গায়ে দিচ্ছে। আবার মুখ দিয়ে খারাপ খারাপ কথা বলছে। তাই আরও বিব্রতকর অবস্থায় যাতে পড়তে না হয়, তাই ৩০ টাকা দিয়ে দিলাম।’

নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুলের দিকে যেতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছাকাছি আরেক যুবককে ঘিরে টাকা চাইতে দেখা যায় বেদে কন্যাদের।

dhaka-faka

প্রথমে ওই যুবক বলেন, ‘টাকা নাই, যা।’ এরপর ১৭-১৮ বছরের এক বেদে কন্যা বলে ওঠেন, ‘শুট-প্যান্ট পরে আছিস, আবার বলছিস টাকা নেই। তুই আসলে ফকির। মনের দিক থেকে সারাজীবই ফকির থেকে যাবি। মানুষকে কখনও উপকার করবি না।’

এক পর্যায়ে ওই যুবক এক বেদে কন্যাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে দ্রুত এগিয়ে যান। এ সময় এক বেদে কন্যা তাকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি করতে থাকেন।

এ দৃশ্য দেখে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকা মো. আরিফুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘ভাই এটা নিত্যদিনের ঘটনা। ফাঁকা রাস্তায় কাউকে একা চলাচল করতে দেখলেই বেদে কন্যারা এভাবে ঘিরে ধরে টাকা চাই। যারা স্বেচ্ছায় টাকা দেয় তাদের কিছু বলে না। কিন্তু কেউ টাকা দিতে না চাইলে গালাগালি শুনতে হয়।’

পথচারীকে গালাগালি করা বেদে কন্যার সঙ্গে কথা বললে সে নিজেকে জোসনা পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমরা বেদে, আমাদের স্থায়ী কোনো ঠিকানা নেই। কেউ আমাদের কাজ দেয় না। আমরা তোমাদের মতো চাকরিও করতে পারি না। কিন্তু বেঁচে থাকতে হলে আমাদেরও তো খাওয়া-পরা লাগে। এ টাকা পাব কোথায়? তাই সাহেবদের কাছ থেকে কিছু চেয়ে চিন্তে নেই।’

টাকা না দিলে গালাগালি করা ঠিক? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সবাইকে গালাগালি করি না। আপনিই তো দেখলেন ও আমাকে কীভাবে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। এভাবে না চলে গিয়ে ভালোভাবে বলেও তো যেতে পারতো।’

dhaka-faka

এদিকে পল্টন, মতিঝিলের মতো যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, রামপুরা, শাহবাগ, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। কোনো অঞ্চলেই পরিবহন চালকদের যানজটে পড়তে হয়নি।

পল্টন মোড়ে কথা হয় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চালক মো. খায়রুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যেদিন অফিস থাকে এয়ারপোর্ট থেকে পল্টন আসতে দুই ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। আজ লেগেছে আধাঘণ্টার মতো। রাস্তা একদম ফাঁকা। কোথাও কোনো যানজটে পড়তে হয়নি। তবে যাত্রী কিছুটা কম।’

একই ধরনের কথা বলেন যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটে চলাচলকারী শিকড় পরিবহনের একটি বাসের চালক মো. মান্নান। তিনি বলেন, ‘আজ কোথাও কোনো যানজট নেই। সব রাস্তায় প্রায় ফাঁকা। এমন রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে মনের দিক থেকে অনেক শান্তি পাওয়া যায়। তবে যাত্রী কিছুটা কম। গাড়িতে উঠতে বা নামতে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি করতে হচ্ছে না।’

এমএএস/এনডিএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।