উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৩ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করি। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি। ২০১৮ সালের বিজয় দিবসে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৯৬ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন জাতীয় ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল সময় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। বাঙালি জাতি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।

‘বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটকে বিপুলভাবে বিজয়ী করে। এই সরকার সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে।’

প্রধানমন্ত্রী মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। তার সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশ ও জনগণের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বিজয় দিবস বাঙালি জাতির অনন্য গৌরবের দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।

এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বিজয়ের এই দিনে তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনকে, যাদের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। বিগত ১০ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে আমরা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাপক উন্নয়ন করেছি।

‘আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পৃথিবীর ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট-প্রযুক্তির অভিজাত দেশের কাতারে যুক্ত হয়েছি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৮৬ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দেশের দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ২১.৮ শতংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ১১.৩% শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ১৭৫১ মার্কিন ডলার। শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই পাচ্ছে। শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে এবং আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তা শতভাগে উন্নীত হবে।

প্রধানমন্ত্রী সরকারের অন্যান্য কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায়। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। সারাদেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, পাতাল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল, নৌ ও যোগাযোগ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে। তার সরকারেই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের পাঁচটি দেশের একটি বাংলাদেশ। উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করা হয়েছে।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে উল্লেখ করে জনগণকে দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনা করাসহ বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটানা ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার কারণে তৃণমূলের জনগণ আজ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম পাবে সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলে সোনার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তারা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিকৃত করে। সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত সরকার এই ধারা অব্যাহত রাখে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সমগ্র দেশ ও জাতি আজ গর্বিত।

তিনি বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমারও শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সারাবিশ্ব আমাদের আর্থসামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করছে। সংবিধান ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার মাধ্যমে এই সব অর্জন সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।’

বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।