২১ আগস্টের ঘটনায় মামলা : প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন
একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন মামলার চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান। তিনি বলেন, যাকে ঘিরে পরিকল্পিত হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল হায়েনার দল; তাদের নৃশংসতার শিকার এবং এই মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের অন্যতম হচ্ছেন জননেত্রী শেখ হসিনা। ওনার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
মামলার চিফ প্রসিকিউটর রেজাউর রহমান বলেন, এই হামলার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এদের একটি হত্যা মামলা অপরটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলা। দুটি মামলাই বিচারাধীন। মামলার চারশ` ৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালত এ পর্যন্ত মোট একশ` ৭৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেছে। আগামীতে আরো সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার নীল নকশা হিসেবে ২১ আগস্ট রক্তাক্ত গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। ন্যায় বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্রপক্ষের চারশ ৯১ জন সাক্ষীর সর্বশেষ সংখ্যাক সাক্ষী আমরা হাজির করবো। তাদের মধ্যে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীও রয়েছেন। এই মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর সংখ্যা প্রায় শতাধিক বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মো. আকরাম উদ্দিন শ্যামল। প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে অন্যতম প্রধান সাক্ষী হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষ্যগ্রহণের প্রক্রিয়া কথা যেহেতু প্রধান আইনজীবী বলেছেন। সেখানে আমার আর কি বলার আছে। তবে তিনি (শেখ হসিনা) যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন সেহেতু তার সাক্ষ্যগ্রহণ একজন কমিশনের মাধ্যেমে দিয়ে হতে পারে। কমিশন হলো বিচার চলাকালীন আদালতের (বিচারকের) আস্থাভাজন একজন আইনজীবী।
বিচারক যাকে নিয়োগ দিবেন কমিশনের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তিনি আদালতের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করবেন। যদি আদালত চায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জবানবন্দি কমিশনের মাধ্যমে নিতে পারেন বলে মত দেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল।
মামলা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা আইনজীবী মো. আকরাম উদ্দিন শ্যামল জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি সাক্ষী দিতে চান তাহলে তিনি ক্যামেরা ট্রায়াল বা কমিশনের মাধ্যমে দিতে হবে বিষয়টা এমন মনে হয় না। শ্যামল বলেন, তিনি যতো গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিই হোক না কেন আদালতে হাজির হয়েই সাধারণ জনগণের মতো সাক্ষী দিবেন বলে আশা করছি।
সেই দিনে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আজও জাতি নানাভাবে স্মরণ করছে সেই ভয়াবহ দিনটিকে। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক নারী পুরুষ।
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার তদন্ত নিয়ে শুরু থেকেই নানা নাটক হয়েছে। বিএনপির আমলে এই হামলার ঘটনায় তখন মামলা হলেও ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়। জজ মিয়া নামে এক নিরীহ লোককে আটক করে তাকে দিয়ে হামলার দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়েই চাপানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলার তদন্ত নতুন মোড় নেয়। জজ মিয়া ছাড়া পান।
সেই জজ মিয়া তার তথ্য জানান, কীভাবে তাকে দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়েছিল। তার দাব সিআইডির কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ, মুন্সি আতিকুর রহমান এবং রুহুল আমিন এ কাজ করেছেন। জজ মিয়া জানান, তাকে চার বছর ওই মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছিল। কারাগারে থাকার সময় সিআইডির কয়েকজন কর্মকর্তা তার পরিবারকে নিয়মিত টাকা-পয়সা দিত।
হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে খুলে যায় গ্রেনেড হামলার জট। পরিষ্কার হয় সবকিছু। পরে সিআইডি অধিকতর তদন্ত করে বর্তমান সরকারের সময়ে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু ও জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীসহ ৫২ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়।
এফএইচ/বিএ