রক্তাক্ত ২১ আগস্ট : নেতৃত্ব নিশ্চিহ্নের এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র


প্রকাশিত: ০৬:০৬ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৫
ফাইল ছবি

আজ রক্তাক্ত ২১ আগস্ট। সে দিনের বিভীষিকাময় এমন হত্যাযজ্ঞ সভ্য জগতে ছিল অকল্পনীয়। আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী এক সমাবেশে ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা সেদিন ঢাকার রাজপথ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। নারকীয় সেই হত্যাকাণ্ড জন্ম দেয় ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়।

সেদিন ছিল শনিবার। বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরেুদ্ধে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরের পর থেকেই সমাবেশস্থলে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হতে থাকে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী এক মিছিল হওয়ার কথা। মিছিলপূর্ব সমাবেশের জন্য মঞ্চ করা হয় ট্রাকের ওপর।

ঘড়ির কাটায় তখন ৫টা বেজে ২২ মিনিট। কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা বক্তব্য দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবিরোধী ঝাঁঝালো বক্তেব্যে গোটা সমাবেশ তখন উদ্দীপ্ত। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে’ বলে বক্তেব্যের ইতি টেনেছেন। হাতে একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে মঞ্চের সিঁড়ির কাছে এগিয়ে আসছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নীচে মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান হাত বাড়িয়ে শেখ হাসিনার জন্য অপেক্ষারত।

ঘাতকদের তর যেন আর তোর সইলো না। ঠিক তখনই বিকট শব্দ। মুহূর্মুহ গ্রেনেড বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো গোটা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। মুহূর্তেই রক্তগঙ্গা বয়ে গেল পিচঢালা কালোপথ। আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বর যেন এক মৃত্যুপুরী। রক্ত-মাংসের স্তূপে ঢেকে যায় সমাবেশস্থল। পরপর ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী। আহত হয় শত শত মানুষ।

ওই হামলার প্রধান টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। এ কারণে প্রথম গ্রেনেডটি মঞ্চ অর্থাৎ ট্রাক লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু ট্রাকের ডালায় লেগে গ্রেনেডটি নীচে বিস্ফোরিত হয়। দেহরক্ষী এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের ত্যাগের বিনিময়ে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।

এদিকে ১৩টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেই ঘাতকেরা ক্ষান্ত হয়নি। জীবিত আছেন জেনে ঘাতকেরা শেখ হাসিনা এবং তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। কিন্তু শেখ হাসিনার গাড়িটি বুলেটপ্রুফ হওয়ায় এ বেলাতেও তিনি প্রাণে রক্ষা পান। ঘাতকের গুলি গ্লাস ভেদ করে শেখ হাসিনাকে আঘাত করতে পারেনি। তবে শেখ হাসিনাকে আড়াল করে ঘাতকের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দেন তার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান।

বর্বর ওই হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও শেখ হাসিনা বাম কানে মারাত্মক আঘাত পান। আঘাতপ্রাপ্ত কানের শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন। শেখ হাসিনাকে হত্যার মূল পরিকল্পনা ব্যর্থ হলেও ওইদিনের বীভৎসতা এক কালো অধ্যায়ের জন্ম দেয়। ঘাতকের প্রথম নিক্ষেপ করা গ্রেনেডটি ট্রাকের ওপর বিস্ফোরিত হলে ওইদিন হয়তো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই প্রাণে রক্ষা পেতেন না। রচিত হতো আরেক ১৫ আগস্ট।

বিস্ফোরিত ১৩টি গ্রেনেডের স্প্রিন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বহু মানুষ। অনেকে হাত-পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নিহতের নিথর শরীর আর আহতের বেঁচে থাকার করুণ আর্তনাতে ভারী হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আকাশ-বাতাস।

শোকের মাস আগস্ট ঘিরে সরকার এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৪০ দিনব্যাপি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা উপলক্ষে আজ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী-ভাতৃপ্রতিমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে।

এএসএস/বিএ  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।