রক্তাক্ত ২১ আগস্ট : বিচার কত দিনে


প্রকাশিত: ০৩:৫৭ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৫

আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার নীল নকশা হিসেবে বিবেচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভয়াল সেই স্মৃতি ফিরে এসেছে আবার। রক্তাক্ত এই ঘটনার বিচার দীর্ঘ ১১ বছরেও হয়নি। বিভিন্ন মহলে এখন প্রশ্ন উঠেছে, মামলার বিচার শেষ হবে কবে? তাদের মতে, এমন আলোচিত একটি মামলার বিচারে যদি এতো দীর্ঘসূত্রতা হয়, তাহলে সাধাারণ মানুষের মামলার ক্ষেত্রে কি ঘটবে! তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ মামলাটি এখন সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে। ইতোমধ্যে চলতি বছরের ১৯ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৭৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আগ্রহ থাকলেও আসামিপক্ষ থেকে কয়েকবার সময় আবেদনের কারণে মামলাটির বিচার কার্যক্রমে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় ১৮ কার্যদিবসে কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেননি। অন্যদিকে মামলার আসামি মুফতি হান্নান, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ একাধিক আসামির অন্য আদালতের হাজির হওয়ার কারণে ১৯ কার্যদিবসে কোনো শুনানি হয়নি।

একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম একটি উল্লেখযোগ্য সময় পর্যন্ত স্থগিত থাকাও আরেকটি কারণ। এছাড়া একজন সাক্ষীর জবানবন্দির বিষয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন মুফতি হান্নান। একই সঙ্গে মাওলানা তাজুল ইসলামসহ তিন জনের আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে ২৮২ দিন মামলাটি কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসুলী সৈয়দ রেজাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, হত্যা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা দুটো মামলায় সমানতালে বিচার কার্যক্রম চলছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে। তবে সব প্রক্রিয়া শেষে রায় পর্যন্ত যেতে আরো সময় লাগবে। বিচার কবে নাগাদ শেষ হবে সেটা না বলতে পারলেও আশা করি আগামী বছর মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হবে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় দলের হেভিওয়েট নেতাকর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় আহত হওয়ার পরে মারা যায় আরো ২ জন। এ নিয়ে মোট ২৬ জন নিহত হন। আহত হন দলের সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫ শতাধিক নেতাকর্মী। পরে এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়।

বর্তমানে মামলা দুটি ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এ আদালতের বিচারক হলেন মো. শাহেদ নূর উদ্দিন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ এজলাসে চলছে মামলার বিচার। মামলার মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এদের মধ্যে ২৬ জন কারাগারে। জামিনে ৮ জন। দেশে-বিদেশে পলাতক আছেন আরো ১৯ জন।

জানা গেছে, এ মামলার ৪৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিচারে সাক্ষী গ্রহণ শুরু হওয়ার ২৭৭ দিনের মধ্যে এসব সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এ মামলার প্রত্যক্ষদর্শী গুরুত্বপূর্ণ কোনো সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেননি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ ভিআইপি ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন ৪০ জন সাক্ষীও আদালতে সাক্ষ্য দেননি। যদিও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চলতি বছর বিচার কার্যক্রম শেষ না হলেও আগামী বছর (২০১৬ সাল) মধ্যে মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে। তবে আসামিপক্ষের একাধিক আইনজীবী বলেছেন, কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগবে এ মামলার বিচারকাজ শেষ হতে।

এ মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ১১ জনকে পিপি হিসেবে নিয়োগ দেন। আইনজীবীদের মধ্যে অধিকাংশই মামলার শুনানিতে অনুপস্থিত থাকেন। একমাত্র প্রধান কৌসুলী ছাড়া অন্যরা উপস্থিত থাকেন না বললেই চলে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদেও মধ্যে কেউ কেউ মন্ত্রীত্ব ও সরকারের সঙ্গে অন্যভাবে জড়িত হওয়ার পর থেকে মামলার দিকে অনেকটা নিষ্কৃয় হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এদের মধ্যে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান হাওলাদার, অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান, অ্যাডভোকেট সানজীদা খাতুনের নাম উল্লেখযোগ্য।

অন্য আইনজীবীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘আগে সাহারা খাতুন ও কামরুল ইসলাম আদালতে আসলেও এখন আর তারা আসেন না। তবে অদৃশ্য কারণে আমাদের পক্ষের অনেক বন্ধুই কোনোদিন আদালতে হাজির হননি। তবে কেউ কেউ মাঝে মধ্যে হাজির হন। তারা হাজির থাকলে আরো ভালো হতো।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘মাঝে মধ্যে হাজির থাকি। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। যে কারণে অনেক দিনই হাজির হতে পারি না।’

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী আদালতে হাজির হন না, তা আমার জানা ছিল না। এ বিষয়টি আমি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। আইনজীবীরা যাতে আদালতে উপস্থিত থাকেন সে বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।`

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের অপ্রাসঙ্গিক জেরা করেও বিচারকে বিলম্বিত করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২০১২ সালের ২৭ মে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা ইউসুফের জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। প্রায় তিন মাস সময় লাগে এ সাক্ষীর জেরা শেষ হতে। এভাবে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষ হতে অনেক সময় লেগেছে।

এ প্রসঙ্গে মামলার অন্যতম আসামি আবদুস সালাম পিন্টুর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আসামিপক্ষকে সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ দিতে হবে। আদালত আমাদের সেই সময়ও দিচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় ২০০৮ সালের ৯ জুন দালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। প্রথম তদন্ত রিপোর্ট আমলে নেয়া হয় ২০০৮ সালের ২৫ জুন। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট শুরু হয় পুনঃতদন্ত। পুনঃতদন্ত রিপোর্ট জমা হয় ২০১১ সালের ৩ জুলাই।

এফএইচ/আরএস/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।