ছুটির ফাঁদে ঢাকা, ‘অদৃশ্য কারণে’ নেই বাস
টানা তিনদিন ছুটির ফাঁদে দেশ। শুক্র-শনি সরকারি ছুটি এবং রোববার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস। টানা তিনদিন ছুটিতে অনেকটা ঈদের আমেজ বিরাজ করছে চাকরিজীবীদের মাঝে। শীতের পিঠা-পুলি খেতে ও স্বজনদের সাথে দেখা করতে ফিরছেন গ্রামের বাড়ি। অন্যদিকে ঘরমুখি এ মানুষদের বিপাকে ফেলে ‘পকেট কাটছে’ এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে ঘরে ফেরা মানুষের উপচেপড়া ভিড়। গতকাল (বৃহস্পতিবার) অফিস শেষ করে বিকেল, সন্ধ্যা বা রাতে যারা যেতে পারেননি তারা ভোরেই চলে এসেছেন বাসস্ট্যান্ডে। কিন্তু ভোরে এসেও পড়েছেন বিপদে! যাত্রীদের বাড়তি চাপে বাড়তি ভাড়া তো নেয়া হচ্ছেই, দূরপাল্লার বাসের কৃত্রিম সঙ্কটও তৈরি করা হয়েছে।
মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে মূলত শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, টাঙ্গাইলসহ উত্তরবঙ্গের বাস চলাচল করে। এসব এলাকায় এসি, গেইটলক বাস ছাড়াও কিছু লোকাল পরিবহন রয়েছে। তবে দূরপাল্লার যাত্রীদের কাছে এসি ও গেইটলক সার্ভিস বেশি জনপ্রিয়, পরিবহনগুলোও সবসময় পাওয়া যায়। তবে আজ শুক্রবারের চিত্র যেন একেবারে ভিন্ন। বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও, বাস রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ঢাকার প্রবেশমুখ গাজীপুর থেকে শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোণা, টাঙ্গাইল এলাকার কোনো বাস ঢাকায় আসছে না। কারণ হিসেবে যানজটের কথা বলা হলেও সকাল পর্যন্ত এ রাস্তায় যানজটের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে গাজীপুর চৌরাস্তাতেও যাত্রীদের ভিড় রয়েছে বলে জানা গেছে। আর সেখান থেকেই ঢাকার সমপরিমাণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে, সুযোগ বুঝে আরও বেশিও আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে ঢাকায় প্রবেশ না করে বাসগুলো গাজীপুর থেকেই ঘুরে যাচ্ছে।
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে শেরপুর যাওয়া সোনার বাংলা পরিবহনের কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। জানা যায়, যাত্রীদের চাহিদা থাকলেও বাস নেই। যাও দুই-একটি বাস রয়েছে, তাতেও বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে শেরপুরের ভাড়া ৩০০ টাকা হলেও নেয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। কাউন্টার থেকে যাত্রীদের বলা হচ্ছে, ‘নিলে নেন, না হলে সরেন। একটু পর আর গাড়ি পাবেন না, তখন ৫০০ টাকা লাগবে।’
কাউন্টার মাস্টারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, রাস্তায় জ্যাম, গাড়ি নেই। এ ছাড়া গাজীপুর থেকে সব গাড়ি ঘুরে যাচ্ছে।
ভাড়া কেন বেশি নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে চাননি। বারবার জিজ্ঞাসা করার পর মাথা নিচু করে রেখে বলেন, ‘বোঝেনই তো।’
এই পথে আরও একটি পরিবহন হলো বৈশাখী। এ পরিবহনটি শেরপুর হয়ে জামালপুরের বকশীগঞ্জে যায়। এ পরিবহনের সার্ভিস তুলনামূলক ভালো হওয়ায় সেখানেও একই অবস্থা। কাউন্টারে টিকিট কাটতে গেলে টিকিট না দিয়ে সরাসরি বাসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিষয়টি একটু সন্দেহ হওয়ায় গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের নিয়ে অন্য বাসে তোলা হচ্ছে, মূলত যে বাসগুলো অন্য সময় লোকালভাবে চলে। যাত্রীদের বোঝানো হচ্ছে, এটাই বৈশাখী পরিবহনের বাস। নেয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
এমনকি শ্রমিক ইউনিয়নের বাসেও বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এ বাসে অন্যান্য দিন ৩০০ টাকা নেয়া হলেও আজ হাঁকা হচ্ছে ৫০০ টাকা। এসি পরিবহনেও একই অবস্থা, তারাও ৫০০ টাকায় টিকিট ছেড়েছে।
ময়মনসিংহে যাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবহন হলো এনা পরিবহন বাস। শুক্রবার সকালে এনা পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে সবচেয়ে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে পরিবহনটি তাদের আগের নির্ধারিত ভাড়া ২২০ টাকাই নিচ্ছে।
শেরপুরগামী যাত্রী আমিনুল বলেন, সোনার বাংলায় অন্যদিন ৩০০ নিলেও আজ ৪০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। তাও বলা হচ্ছে গাড়ি নেই। কী করবো বাধ্য হয়েই টিকিট নিলাম। এদের নৈরাজ্য দেখার কেউ নেই।
একই রুটের যাত্রী এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, তার বাড়ি যশোর, হঠাৎ প্রয়োজনে শেরপুর যাচ্ছি। ঈদের মধ্য জানি যাত্রীদের জিম্মি করে পরিবহন মালিকরা পকেট কাটেন। এখন দেখছি সুযোগ পেলেই তারা পকেট কাটেন।
অবস্থা ভালো না (পরে টিকিট না পাওয়ার ভয়) দেখে পরিচয় গোপন রেখেই টিকিট কেটেছেন বলে জানান তিনি।
বৈশাখী পরিবহনের এক যাত্রী ইমতিয়াজ বলেন, কী করবো ভাই? জানি তারা চিটিং করছে। আমরা তো তাদের কাছি জিম্মি। দেখেন রোডে তেমন জ্যাম নেই, তাও বলা হচ্ছে জ্যামের জন্য গাড়ি নেই। কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
টাঙ্গাইলে যাবেন তামান্না ইসলাম। ভোরে টার্মিনালে এসেও সকাল ৮টা পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বাসে উঠতে পারেননি তিনি। ক্ষোভ নিয়ে বলেন, দেশটা কবে যে ভালো হবে? এভাবে ভোগান্তি দেয়ার কোনো মানে হয় না। দেখারও যেন কেউ নেই।
এনা পরিবহনের যাত্রী আল আমিন বলেন, এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছি। এখন গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। বলা হচ্ছে গাড়ি আসছে, কখন আসে কে জানে।
এনার কাউন্টারে কথা বলে জানা যায়, রোডে তেমন জ্যাম নেই, তাদের গাড়িও রয়েছে পর্যাপ্ত। তবে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় অন্যান্য দিনের চেয়ে দ্রুত ছেড়ে গেছে। ছেড়ে যাওযার তুলনায় বাস কাউন্টারে আসেনি, যার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
আরএস/এনএফ/পিআর