অামরা তো ১৫ দিন পরপর জেলখানায় যাই : প্রধানমন্ত্রী
‘লেট’স টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের সঙ্গে তার শৈশব ও কৈশরসহ নানা স্মৃতি তুলে ধরলেন। স্কুলজীবনের একটি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, একবার স্কুলে স্ট্রাইক করাতে গিয়ে দেখি, খুব লম্বা-চওড়া এক পুলিশ অফিসার; সে আমাকে ধমক দিচ্ছে। আমরা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে, যে কেউ যেতে পারবে না। তো খুব ধমক দিচ্ছে যে, তুমি জানো আমি কে? তোমাকে আমি জেলে নিতে পারি। আমি বললাম, জেলখানায় তো আমরা প্রতি ১৫ দিন পরপর যাই। আমাকে এই ভয় দেখিয়ে তো লাভ নাই। আমি তো জেলখানায় সবসময় যাই। অামাকে বললো সে, হ্যাঁ! তোমার নাম কী? আমি বললাম, আমার নাম, বাবার নাম, হেডস্যার জানেন। তাকে জিজ্ঞাসা করে নিয়েন।
শেখ হাসিনা বলেন, এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মেয়ে ছিল, তারা ইশারা দিয়ে আমাকে চলে আসতে বললো সেখান থেকে। ব্যস ওখান থেকে চলে আসলাম। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের বেড়া ফাঁক করে ওখান দিয়ে ঢুকে যেতাম। তখন বাস ছিল মুড়ির টিনের মতো। তা সে রকম একটা গাড়িতে পুলিশ আমাদের ধাওয়া করছে। ওখান থেকে বের হয়ে পলাশী মোড় হয়ে, এখন যেটা জহুরুল হক হল- তার ভেতর দিয়ে ওয়াল টপকে ওখান থেকে আমরা রোকেয়া হলে ঢুকে গেলাম।
ঘণ্টি বাজিয়ে স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছিলাম
কৈশরের একটি মজার ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ছোটবেলার একটা মজার ঘটনা বলি, ধর্মঘট চলছে তখন। আমরা ঠিক করলাম, স্কুল ছুটি দিতে হবে। তা এমনিতে তো আর দেবে না। হেডস্যারের রুমের পাশেই স্কুলের ঘণ্টিটা। এখন ঘণ্টিটা আমরা কীভাবে বাজাবো! আমরা একটা মেয়েকে দায়িত্ব দিলাম ঘণ্টিটা বাজাবে, আরও কয়েকজনকে দায়িত্ব দিলাম- দারোয়ান কিছু বোঝার আগেই গেটটা খুলে দেবে। যখন ঘণ্টি বাজাতে শুরু করলাম ছোট বাচ্চারা সব ছুটে পালাতে শুরু করলো। তখন মজার বিষয় হলো বাচ্চারা ছুটছে তাদের ধরার জন্য শিক্ষকরাও ছুটছে। আর তখন আমরা বের হয়ে চলে এলাম। স্কুল থেকে সবাই এক দৌড়ে চলে গেলাম। মিটিংয়ে গেলাম। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি।
প্রধান শিক্ষক সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হেডমাস্টার আবার ভীষণ কড়া ছিলেন। কাজী ওমর আলী সাহেব, আমি উনাকে দেখলে ভয়ে দৌড়ে পালাতাম। কিন্তু খুব আদরও করতেন, খুব ভালো শিক্ষক ছিলেন। মানে গাধা পিটিয়ে মানুষ করা বলে না, উনিও তেমন আমাদের গাধা পিটিয়ে মানুষ করতেন।
মায়ের কাছে আবদার মেটাতে হাঙ্গার স্ট্রাইক করতাম
মায়ের কাছে আবদার মেটানোর স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, একদিন মা হঠাৎ করে বললেন মিটিংয়ে যেতে পারবে না। আর মা যদি একটা কথা বলতেন তা অমান্য করে কিছু করা আমাদের সাধ্যে ছিল না। মা দরজাও লাগাতেন না, গেটও লাগাতেন না। কিছু করতেন না। শুধু বলতেন যেতে পারবে না। আর আমাদের সেই শিক্ষা ছিল, মা বললে শুনতে হবে। কিন্তু প্রতিবাদও তো করতে হবে। সুতরাং হাঙ্গার স্ট্রাইক। নাস্তা খাবো না, ভাত খাবো না, কিচ্ছু খাবো না। বসে বসে ভ্যা ভ্যা করে কান্না!
বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, আমার দাদা থাকলে খুব ভালো হতো। তিনি থাকা অবস্থায় এমন হলো, খুব জরুরি মিটিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে যেতেই হবে। মা বললেন, ‘না আজকে বের হতে পারবে না।’ দাদা শুধু ডেকে মাকে বললেন, ‘দেখ, আমি তো কোনোদিন আমার ছেলেকে মানা করিনি। আমি তো কোনোদিন নিষেধ করিনি, তুমি নিষেধ করছো কেন? ও যেতে চায়, যেতে দাও।’ আমার মা আবার মুরুব্বিদের কথা খুব মেনে চলতেন। দাদা বলেছেন। মা আর কিছু বললেন না। যাও, দাদাকে পেয়েছো এখন যাও।
আলসেও ছিলাম খুব
’৭৫ পরবর্তী সংকটময় সময়ের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ পরবর্তী ৩-৪ বছর একটা অন্ধকার সময় ছিল। বলা যায়, একটা বাসায় বন্দি। সব জায়গায় যাবার সুযোগ ছিল না। এমনকি নিজের পরিচয় দেয়ারও সুযোগ ছিল না। একটা নামও দেয়া ছিল। ওই নামে আমাদের পরিচয়। নিজের পরিচয়টাও ছিল না। তখন মনে হতো, জীবনের সবথেকে কম যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু নিয়েই চলব। সেখানে থেকে সংসারের প্রতিটি কাজ একে একে আমাদের শিখতে হলো, করতে হলো। করে করে শিখলাম।
বাবা-মায়ের সংসারের আদুরে জীবনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে বাড়ির বড় মেয়ে ছিলাম। আলসেও ছিলাম খুব। এমনও অনেক দিন গেছে, না খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম। আব্বা এসে ঘুম ভাঙিয়ে ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে দিতেন। আমার খুব বদ-অভ্যাস ছিল বসে গল্পের বইপড়া আর গান শোনার। তখন মা এককাপ চা বানিয়ে এনে দিতেন। নিজে খুব একটা বেশি কাজ করতাম না, আলসে ছিলাম এটা ঠিক। আর সেখান থেকে এমন একটা অবস্থায় পড়ে গেলাম, যে ঘর ঝাড়ু দেয়া থেকে শুরু করে সবকিছু নিজেদের করতে হতো, করতাম।
তরুণদের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর ১৯৭১ সালের গৃহবন্দি জীবন, ১৯৮১ সালের পর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বগ্রহণ ও পরবর্তী সংগ্রামের জীবনের কথা উঠে আসে।
‘লেট’স টক ইউথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো তরুণদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থী, উদ্যোক্তা, তরুণ পেশাজীবী, অ্যাথলেটস, খেলোয়াড়, সংস্কৃতিকর্মীসহ দেড়শোর মতো তরুণ অংশ নেন। তরুণদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী, শোনেন তরুণদের স্বপ্নের কথাও। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন ডা. নুজহাত চৌধুরী।
এফএইচএস/বিএ