কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৮ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

দেশে গুণগত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ৭৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি টাকায় তা দাঁড়ায় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী তিন বছরে মোট তিন ধাপে এ ঋণ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এ ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ৫ বছর। ২ শতাংশ সুদে ৩০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘ঋণের অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে চলতি বছরে ২৫ কোটি ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভা। ১২ ডিসেম্বর বোর্ড সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে প্রাপ্ত ঋণের এটিই হচ্ছে সর্ববৃহৎ একক ঋণ।’

বিশ্বব্যাংকের এত বড় ঋণ প্রসঙ্গে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের জব প্রবৃদ্ধি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো। কিন্তু আগের তুলনায় দেশের জব গ্রোথ পড়ে গেছে এবং এ জব গ্রোথের ইমব্যালেন্স হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘দেশে জবলেস গ্রোথ হয়নি তবে সেটা লেস জব গ্রোথ হয়েছে। জব গ্রোথ আগে ছিল ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং এখন সেটা কমে হয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ ।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এখন কিছু ক্ষেত্রে কম সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া এখনও ঋণের সুদের হার বাড়ায়নি, তবে জাপান ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে অনেক আগেই।’

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় সূত্র জানায়, ‘প্রগ্রাম্যাটিক জবস ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’- এর আওতায় এই সহায়তা পাবে বাংলাদেশ। এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো- নারী, তরুণ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীসহ নাগরিকদের জন্য অধিকতর এবং অপেক্ষাকৃত ভালো কর্মসংস্থান সৃষ্টির বাধাগুলো দূর করতে শক্তিশালী নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করা।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি ধীর হয়েছে এবং যা তৈরি পোশাক খাতে প্রায় স্থবির হয়ে আছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ২০০৩-১০ সাল সময়কালের ২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ২০১০-১৬ সময়কালে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। নারী, পিছিয়ে থাকা অঞ্চলের শ্রমিক এবং তরুণরা গুণগতমানের কর্মসংস্থানে প্রবেশের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে, যার মোকাবিলায় অকৃষিখাতে উল্লেখযোগ্য হারে কর্মসংস্থান বাড়ানোর প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা ও দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সমানতালে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়নি। বাংলাদেশের জন্য অধিকতর এবং গুণগত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার একটি পূর্বশর্ত। প্রতি বছর শ্রম বাজারে যুক্ত হওয়া ২.২ মিলিয়ন তরুণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে এবং শ্রম বাজারে আরও বেশি নারীকে আকৃষ্ট করতে হবে। এই অর্থায়নটি বাণিজ্য ও বেসরকারি বিনিয়োগ উজ্জীবিত করার সংস্কার ও শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করবে। পিছিয়ে পড়া জনসংখ্যার কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে।’

সংস্থাটির লিড ইকোনমিস্ট ও টাস্ক টিম লিডার টমাস ফারোল বলেন, ‘এই কর্মসূচি শ্রমঘন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের গুণগতমান উন্নয়ন, বিভিন্ন অভিঘাত মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নারী, তরুণ ও অভিবাসীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া নারী, তরুণ ও প্রবাসী অভিবাসীদের অপেক্ষাকৃত ভালো কর্মসংস্থানের জন্য উপযোগী করে তুলতে এই কর্মসূচি তাদের বাজার-চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা তৈরিতে সাহায্য করবে।’

এমইউএইচ/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।