কুষ্টিয়ায় পুলিশের মধ্যে বদলি আতঙ্ক
কুষ্টিয়ায় পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রত্যাহার আর বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহে এ জেলায় দুইজন ওসি প্রত্যাহারসহ ৪ জনকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
গত ১৫ অাগস্ট শোক দিবসের কর্মসূচি শেষে আওয়ামী লীগের দু`গ্রুপের সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশে প্রত্যাহার ও গণবদলি শুরু হয়েছে। ঘটনার পরের দিন `দায়িত্ব এবং কর্তব্যে` অবহেলার কারণ দেখিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) আব্দুল খালেককে প্রত্যাহার করে খুলনা রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।
এদিকে ওসি আব্দুল খালেককে প্রত্যাহারের পর থানার দুই কর্মকর্তাসহ আরো চারজনকে একযোগে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই শওকত হোসেনকে কুষ্টিয়া আদালতে, এএস আই আনোয়ার হোসেনকে মিরপুর থানাধীন কাকিলাদহ পুলিশ ক্যাম্পে, কনস্টেবল আনোয়ার হোসেনকে পিপুলবাড়িয়া ক্যাম্পে ও বকসি একারমুলকে একই থানার আওতাধীন তেকালা ক্যাম্পে বদলি করা হয়েছে।
একের পর এক পুলিশ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়ায় কুষ্টিয়া পুলিশে বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন কাকে প্রত্যাহার বা বদলি করে দেয়া হয় এ আতঙ্ক কাজ করছে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে। এ ঘটনায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ১৫ আগস্ট শোক দিবসের কর্মসূচি শেষে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় তাদের ’বলির পাঠা’ বানানো হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের চেইন অব কমান্ড ধরে রাখার জন্যই তাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ১৫ আগস্টের ঘটনার দিন জেলা বিশেষ শাখা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পুলিশের ডিউটি ভাগ করে দেয়া হয়। পুলিশের একটি দলকে রাখা হয় জেলা আওয়ামী লীগের শোক র্যালির আগে। আরেকটি দলকে রাখা হয় র্যালির শেষে। একটি দলকে দায়িত্বে রাখা হয় বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে, একটি শিল্পকলা একাডেমীর সামনে এবং অপরটিকে মজমপুর গেট যেখানে গিয়ে র্যালি শেষ হবে সেই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল চত্বরে।
নির্ধারিত কোনো দায়িত্ব না থাকায় মডেল থানার ওসি আব্দুল খালেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বকর সিদ্দিক ও মডেল থানার এএসপি লাবণী খন্দকারের সঙ্গে মজমপুরস্থ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল চত্বরে অবস্থান নেন।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ শোক র্যালি পরবতী বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সমাবেশ শেষ করে একে একে নেতা-কর্মীদের বিদায় দিয়ে আমরা যখন নেতৃবৃন্দ চলে আসছিলাম ঠিক তখনই সংঘর্ষ বেঁধে যায়
আজগর আলী দাবি করেন, সেদিন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল চত্বরে বা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কোনো ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাটা কোথায় ঘটেছে এটাও আমাদের জানা নেই।
সংঘর্ষের সময়ের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ওসি আব্দুল খালেক শর্টগান হাতে নিয়ে গুলি ছুঁড়তে থাকা যুবককে ধরার জন্য একাই তার পিছু ধাওয়া করেন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বকর সিদ্দিক স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজসহ তার কর্মী সমর্থকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই দিন ঘটনাস্থলের অনেক দূরে শ্যামলী কাউন্টারের কাছে ছুরিকাঘাতে সবুজ নামের ওই যুবক নিহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুজনকে আটক করে। ঘটনার পর ওসি আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের থানাপাড়াস্থ নিজ বাড়ি থেকে ৪৬ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ৬৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলিসহ একটি শর্ট গান উদ্ধার করেন।
আল-মামুন সাগর/এসএস/পিআর