অধিকাংশ থানায় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়
১১ ডিসেম্বর। একাত্তরের এদিন মার্কিন সপ্তম নৌ বিহারের টাস্কফোর্স বঙ্গোপসাগর অভিমুখে যাত্রার প্রস্তুতি নেয়। এদিকে মিত্রবাহিনী দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায়। দেশের অধিকাংশ থানায় স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘের অনুরোধে বিদেশি নাগরিকদের স্থানান্তরের জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে সাময়িক সময়ের জন্য বিমান হামলা স্থগিত রাখা হয়। এদিন ইসলামাবাদে আর ঢাকায় জেনারেল নিয়াজী ও রাও ফরমান আলী দিশেহারা হয়ে পড়েন। যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় অনিবার্য। অথচ লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী ঢাকা বিমানবন্দর পরিদর্শন করতে গিয়ে দম্ভভরে বলেন, কোন ক্রমেই শত্রুকে কাছে ঘেষতে দেয়া চলবে না। পাকিস্তানি বাহিনী তাদের ঐতিহ্যকে আরও উজ্জ্বল করবে। পরে বিমানবন্দরে তিনি বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে সর্বশেষ যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করেন।
এদিকে রণাঙ্গনে যৌথবাহিনী দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত করে নিজেদের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত অব্যাহত রাখে। সীমান্তে মিত্রবাহিনী প্রচণ্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন হয। পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে তুমুল লড়াই চলতে থাকে। সন্ধ্যায় সম্মিলিত বাহিনী বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মধ্যবর্তী গোবিন্দগঞ্জে শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণ চালায। সারারাত যুদ্ধের পর হানাদাররা ভোরের দিকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
ঢাকার অভিমুখে চারদিক থেকে আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে বাংলার বীর মুক্তি সেনারা এগিয়ে আসছিল। পথে পথে যেসব জনপদ গ্রাম শহর বন্দর পড়ছিল সেগুলোতে মুক্তিসেনারা নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে ওড়াতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।
এদিন জামালপুর, মুন্সীগঞ্জ, লাকসাম, আশুগঞ্জ দিনাজপুরের হিলিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। যদিও এসব এলাকা মুক্ত করতে গিয়ে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীকে ব্যাপক যুদ্ধ করতে হয়। শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার মাটি। মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী নিয়ন্ত্রিত টাঙ্গাইলের মধুপুর অঞ্চলে এদিন মিত্রবাহিনীর ৭০০সৈন্য অবতরণ করে।
এ সময় পাকিস্তানি ব্রিগেডের সঙ্গে তাদের তীব্র যুদ্ধ হয়। অন্যদিকে পাকবাহিনী আরেক শক্ত ঘাটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও উপকূলীয় অবকাঠামো জাহাজ নৌ-যান ইত্যাদি সম্পন্ন করার জন্য ভারতীয় নৌ-বাহিনী বিমান ও যুদ্ধজাহাজ ব্যাপক তৎপরতা চালায়। একের পর এক বোমা ও রকেট হামলা চালিয়ে বিধ্বস্ত করে দেয় পাকহানাদারদের সবকিছু। আকাশ ও স্থলে মুক্তি এবং মুক্তি বাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা পাক সৈন্যরা নদীপথে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সর্বোচ্চ সতর্ক প্রহরা যে আগেই বসানো হয়েছিল তা জানা ছিলো না হানাদারদের। তাই পাকি সামরিক পোশাক ছেড়ে সাধারণ বেশে নদী পথে অনেক পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে।
ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানায, যদিও পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধাবস্থা খুব ভালো নয়, তারপরও আমাদের আত্মসমর্পণের প্রশ্নই ওঠে না। এদিকে বেলা ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।
এফএইচএস/এমবিআর/জেআইএম