মন্ত্রী-সচিবের আশীর্বাদে মায়ের কোলে সুরাইয়া


প্রকাশিত: ১০:১৭ এএম, ২০ আগস্ট ২০১৫

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে অবস্থিত ছোট্ট সম্মেলন কক্ষে তিল ধারনের জায়গা নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব, হাসপাতাল পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিবেদক, আলোকচিত্রী ও ক্যামেরাম্যানরা সকলেই বৃহস্পতিবার দুপুরে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়াকে বিদায় জানাতে হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন। ভিতরে বসার জায়গা না পেয়ে অনেকেই ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে ছিলেন।

বিদায় অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে বক্তৃতাপর্ব শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ২৯ দিন বয়সী শিশু সুরাইয়াকে আদর করে মার কোলে তুলে নেন। পরম স্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে মা নাজমা বেগমের হাতে তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত সকলেই তুমুল করতালির মাধ্যমে মা ও মেয়েকে বিদায় ও শুভকামনা জানান। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের আলোকচিত্রীর ফ্লাস লাইটের আলো আর ক্লিক ক্লিক শব্দে অবিরাম সাটার চেপে ফটোগ্রাফি করা আর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্যামেরাম্যানদের রেকর্ডিং যেন থামতেই চাইছিল না।

রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ নাসিম অধিকাংশ সংবাদকর্মীর পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বার বার বলছিলেন, নাসিম ভাই, আমাদের দিকে একটু তাকান, বাচ্চাটাকে আবার একটু মায়ের কোলে তুলে দিন ইত্যাদি ইত্যাদি অনুরোধ আসতে থাকে। এক পর্যায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কৌতুকচ্ছলে বলেন, তাড়াতাড়ি শেষ করুন। আপনারাই আবার রিপোর্ট লিখবেন অধ্যাপকরা ওয়ার্ডে রোগী ফেলে অনুষ্ঠানে এসে বসে আছেন।

তিনি বলেন, আপনারা তো এতদিন নিউজের হেডলাইন করেছেন। আজ আমি একটা হেডলাইন দিচ্ছি ‘সুস্থ হয়ে সুরাইয়া মায়ের কোলে চড়ে বাড়ি চলে গেল’ এটা ঠিকঠাক করে ছাপিয়ে দিবেন।

এমনই এক আনন্দঘন পরিবেশে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া ও তার মা নাজমা বেগমকে ঢামেক হাসপাতাল থেকে শুভ বিদায় জানান। বিদায়কালে নাজমা বেগম আল্লাহ তায়ালার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি মাগুরা ও ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসার সাথে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সুস্থ মেয়েকে বুকে ফিরে পেয়ে তিনি ভীষণ খুশী। তিনি কল্পনাও করতে পারেননি মেয়েকে ফিরে পাবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতে মেয়েকে চিকিৎসক বানাতে চান বলে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের জানান।

সুরাইয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড প্রধান নবজাতক বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা জানান, শিশু সুরাইয়া এখন সুস্থ। সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার শরীরে কোন জটিলতা ধরা পড়েনি। সে নিজে নিজেই মায়ের বুকের দুধ পান করতে পারছে। প্রস্রাব-পায়খানাও  স্বাভাবিক। বোর্ডের সদস্যদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হচ্ছে আজ।

শিশুটির পরবর্তীতে যে চিকিৎসা প্রয়োজন হবে তা মাগুরার ডাক্তাররা দিতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.কানিজ হাসিনা শিউলি শিশুটির বাবা-মায়ের হাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে নগদ ৬৫ হাজার টাকা তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান, ঢামেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান, শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল আলম, অধ্যাপক আবদুল হানিফ টাবলু, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলি, শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. এখলাসুর রহমান, গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ফেরদৌসি ইসলাম, নবজাতক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা , হৃদরোগ বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, চক্ষু বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ফরিদুল আলম, অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়েট্রিক সার্জনস অব বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল আজিজ, থোরাসিক বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুল আলম ও ঢামেক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নাক-কান-গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দেবেশ চন্দ্র তালুকদার সহ বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এমইউ/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।