অরিত্রির আত্মহত্যা : ব্যবস্থা নিতে র‌্যাব-পুলিশকে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৭ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

অরিত্রির আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে ‘প্রমাণিত’ হওয়ায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে র‌্যাব ও পুলিশকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বুধবার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে এ চিঠি পাঠানো হয়।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী হিসেবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ জিনাত আক্তার ও প্রভাতী শাখার শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে দোষী সাব্যস্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপাশির ও এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

র‌্যাব ও পুলিশের কাছে পাঠানো চিঠির সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে দোষী সাব্যস্ত করে তিন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।

অপরদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে পাঠানো অপর চিঠিতে অরিত্রির আত্মহত্যার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে বরখাস্তসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়।

এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে পাঠানো আরেক চিঠিতে তিন শিক্ষকের বেতন-ভাতা বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

VNS-student-suicide-rab

শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে ৩ ডিসেম্বর রাতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক অধ্যাপক মো. ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটিতে তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।

তদন্ত কমিটির সুপারিশ তুলে ধরে নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অরিত্রির বাবা-মা যখন আবেদন নিয়ে আসেন তখন প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শিফট ইনচার্জ (প্রভাতী শাখা) জিনাত আক্তার, শ্রেণি শিক্ষক এ তিনজন ভয়ভীতি দেখান। অরিত্রির পিতা-মাতার সঙ্গে অধ্যক্ষ ও শিফট ইনচার্জ নির্মম ও নির্দয় আচরণ করেন, যা অরিত্রিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলে এবং তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।

অরিত্রি পিতা-মাতার প্রতি অসম্মানের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি বলেই তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়। যার দায় কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠানে প্রধান, শিফট ইনচার্জ ও শেণি শিক্ষিকা এড়াতে পারেন না।’

‘সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে অরিত্রির আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে অভিযোগে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে’ বলেন মন্ত্রী।

তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেদন অনুযায়ী এ তিনজনকে আমরা বরখাস্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গভর্নিং বডিকে নির্দেশ দিচ্ছি। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ ও বরখাস্তের কাজটি করে গভর্নিং বডি, আমরা সরাসরি করতে পারি না।

তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে বিভাগীয় মামলাসহ অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এই তিন শিক্ষকের এমপিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত ৩ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারী। এর আগের দিন পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে তাকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ।

আরএমএম/এনডিএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।