ভিকারুননিসার ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৪২ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

শিক্ষার্থীর আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলনের মধ্যে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেইলি রোড শাখার ক্লাস ও পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (৫ ডিসেম্বর) ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ও গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারি সুলতানা এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সহপাঠীর মৃত্যুর ঘটনায় মেয়েরা পড়াশোনা করতে পারছে না, আমরাও সমব্যথিত। এ কারণেই আমাদের এ সিদ্ধান্ত। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

মুশতারি সুলতানা বলেন, প্রয়োজন বন্ধের দিন অথবা শুক্রবার ক্লাস নেয়া হবে। এছাড়া যখন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত তখন এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। মেয়েদের স্বার্থেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

মিডিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বানাবেন না।’ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, দুই-একজনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকতে পারে, কিন্তু সবার বিরুদ্ধে নয়। যাদের বিরুদ্ধে এমন অভেযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে সহপাঠী শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীকে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ দিয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে বাধ্য করার প্রতিবাদে আজ (বুধবার) সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সহপাঠীর আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বেইলি রোড শাখার গেটের বাইরে বসে পড়ে তারা।

এ সময় ভিকারুননিসা ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের সড়কে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’ (ন্যায় বিচার চাই) স্লোগান দেয় তারা। এ ছাড়া নানা ধরনের প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড তৈরি করে তা প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীরা।

মাশনুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, দোষীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা নিয়মিত রাস্তায় নামব। আর কেউ যেন এমন মৃত্যুর শিকার না হয় -সেটি নিশ্চিত করতেই আমাদের এ উদ্যোগ।

ভিকারুননিসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিদা আক্তার বলে, আমাদের সহপাঠীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়নি, তাকে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
আমরা জড়িত শিক্ষকদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার চাই।

গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী’ হিসেবে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রির বাবা। মামলার আসামিরা হলেন- অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনা।

এ ছাড়া ওই ঘটনায় ভিকারুননিসার শিক্ষক আতাউর রহমান, খুরশিদ জাহান এবং গভর্নিং বডির সদস্য ফেরদৌসী বেগমকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর) ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক অধ্যাপক মো. ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উভয় কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক প্রীতিশ কুমার সরকারকে নিয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে অরিত্রি অধিকারী কেন আত্মহত্যা করেছে এর কারণ খুঁজতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কমিটিতে একজন অতিরিক্ত শিক্ষা সচিব, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী এবং বিচারক থাকবেন। তারা অরিত্রি আত্মহত্যার ঘটনা এবং সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ রকম ঘটনা তদন্ত করে কারা দায়ী এগুলো খুঁজে বের করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেবেন।

অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তারা বাবা দিলীপ অধিকারী সাংবাদিকদের বলেন, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করে। এ অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি।

এআর/আরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।