নিজেদের আলোচনা সভায় ‘সমালোচিত’ ব্র্যাক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৩৬ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রতিবন্ধীদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। মেট্রোরেলে প্রতিবন্ধীদের প্রবেশ নিশ্চিত করা সংক্রান্ত এ আলোচনা সভাটি রোববার রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়।

সভার শুরুতে বক্তব্য দিতে গিয়ে ব্র্যাকের পরিচালক মো. মুসা এক পর্যায়ে বলেন, প্রতিবন্ধী কথাটা বলতে আমি লজ্জাবোধ করছি।

ব্র্যাক পরিচালকের এমন কথার সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত বেশ কয়েকজন প্রতিবন্ধী প্রতিবাদ করে উঠেন। একজন বলেন, এমন মন্তব্য করা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। এটা আমরা প্রত্যাশা করিনি। রাষ্ট্র থেকেই প্রতিবন্ধী শব্দটি ঠিক করে দেয়া হয়েছে, সেখানে আপনারা লজ্জাবোধ করেন কেন? এমন কথা বলা কিছুতেই ঠিক হয়নি।

এখানেই থেমে থাকেনি ব্র্যাকের সমালোচনা। অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে আশরাফুল নাহার মিষ্টি নামের একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী বলেন, ব্র্যাক বলছে তারা প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে নিয়ে চলতে চাই। কিন্তু এখানে ব্র্যাকের যে ওয়াশরুম আছে তা প্রতিবন্ধীদের জন্য মোটেই উপযুক্ত না।

তিনি বলেন, একজন সাধারণ মানুষের যেমন প্রাইভেসি আছে, প্রতিবন্ধী মানুষেরও তদ্রুপ প্রাইভেসি আছে। কারণ আমার হিউম্যান বডি এবং আপনার হিউম্যান বডি আলাদা নয়।

এ সময় তিনি ব্র্যাক সেন্টারের র্যাম্প’র সমালোচনা করেন। হুইল চেয়ারে চলাচল করা মিষ্টি বলেন, ওয়াশরুমের মতোই র্যাম্পও প্রতিবন্ধী মানুষের উপযোগী নয়। প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য তখনই উপযোগী হবে, যখন আমি মিষ্টি একাই ওই র্যাম্পটি ব্যবহার করতে পারবো।

আশরাফুল নাহার মিষ্টি যখন ব্র্যাকের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন অতিথিদের আসনেই বসে ছিলেন ব্র্যাকের পরিচালক মো. মুসা। তবে মিষ্টির বক্তব্যের কোনো উত্তর বা ব্যাখ্যা দেননি তিনি।

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ডিজি আব্দুস সালাম, অস্ট্রেলিয়ান ডেপুটি হাই কমিশনার পেন্নী মর্টন। এতে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এন সিদ্দিক।

প্রধান অতিথির বক্তব্য কাজী রিয়াজুল হক বলেন, প্রতিবন্ধীরা শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান সবদিক থেকে এগিয়ে আছে। কিন্তু যখন এটা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করার প্রশ্ন আসে তখন তারা আমাদের কিছু সৃষ্ট সমস্যার কারণে বা আমাদের কিছু অজ্ঞতার কারণে সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, প্রতিটি ভবন যখন করা হবে, তখন রাজউক বা অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন বা যারা ভবনের প্লান পাস করেন, তাদের প্রতিবন্ধীদের সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রতিবন্ধীদের প্রতিবেদন ছাড়া ভবনের অনুমোদন দেয়া যাবে না।

প্রশ্ন উত্তর পর্বে এম এন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেলের স্টেশন কেউ ময়লা করলে আমরা তার ওপর নির্দয় হবো। কেউ এটি প্রথমবার করলে তাকে কাউন্সিলিং করা হবে। তবে দ্বিতীয় বার করলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেব।

ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভাড়া দুইটি ধাপে করা হবে। যারা বয়স্ক মানুষ তাদের ভাড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা থাকবে। আর প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ সিটে অন্য কেউ বসতে পারবে না।

এম এন সিদ্দিক বলেন, প্রত্যেকটি স্টেশনে এমআরটি পুলিশ থাকবেন। এ পুলিশ সদস্যরা শিক্ষায়, আইটি দক্ষতায় সবদিক থেকেই হবেন সাধারণ পুলিশের থেকে ভিন্ন।

এমএএস/জেএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।