নির্বাচন ঘিরে গুজব ছড়ানোর আশঙ্কা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল ও সহিংস পরিবেশ তৈরি, ভোটারের মনোভাব পরিবর্তনের চেষ্টা ও ভোট প্রভাবিত করার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের কাজে দেশি ও বিদেশি কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তৎপর রয়েছে। তবে গুজব ও মিথ্যে তথ্য প্রচার ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আরও কিছু উদ্যোগ নেয়া হবে। আশা করছি, এবারের নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।’
শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সেগুন রেস্তোরায় ‘জাতীয় নির্বাচন : গুজব ও সহিংসতা প্রতিরোধে সম্প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিডিয়া মিউজিয়াম অব বাংলাদেশ এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও গুজব বা অপপ্রচর মারাত্মক একটি সমস্যা। এই সমস্যা আরও অনেক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। কখনও কখনও দেখেছি, গুজব বা অপপ্রচার অবশ্য পজিটিভি অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন ১৯৭১ সালে এম আর আক্তার মুকুলের চরমপত্রের কথা। সেখানে গুজব পভিটিভিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, গুজব দুইরকম হয়। এক, ইনোসেন্ট গুজব। এ রকমের গুজবে দেখা যাচ্ছে- চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন কিংবা এটিএম শামসুজ্জামান, নায়ক রাজ্জাক মারা গেছেন। যদিও তা সত্য নয়। এতে করে সহিংসতার সম্ভাবনা নেই। আরেক ধরণের গুজব হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা ইনটেনশনালি মিথ্যে তথ্য প্রচার করা। এটাই আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করছি। এর উৎসগুলো যদি খুঁজি, দেখবো- ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফেইসবুক টুইটার ও ইউটিউবের মাধ্যমে। আরেকটা হলো অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনো রিপোর্টার কিংবা সংবাদদাতা নিজের অনুরাগ কিংবা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো তথ্য পরিবেশন করবেন না। নিউজের সাথে তথ্যের সত্যতা থাকে। পেশাদারিত্বের সাথে যদি তাদের দায়িত্ব পালন করেন তবে কোনো গুজব বা অপপ্রচার মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার পাবার কথা নয়। একটা নিউজ বা সংবাদ তৈরি করার ক্ষেত্রে চেক করা উচিত। যে তথ্যটি পরিবেশন করা হচ্ছে তা ফিল্টারিং করা উচিত। পুলিশ তথ্য দিলেই তা প্রকাশ করবেন এমনটি নয়, তাও চেক করার দরকার আছে।
কাউন্টারর টেরিরিজম প্রধান বলেন, বিগত দনে দেখেছি- গুজবের কারণে অনেক সময়ই সহিংসতা ও নৃসংস ঘটনা ঘটেছে। পরে দেখা গেছে তা সিস্টেমেটিক উপায়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচারের চেষ্টা ছিল। সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে। এমন গুজব প্রচার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। এমন তথ্য যাচাই করার ব্যবস্থা গণমাধ্যমে থাকা উচিত। সিএনই, চিফ রিপোর্টার কিংবা সম্পাদক ফিল্টারিং করবেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, সকলেই আশাবাদী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেজন্য নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কাজ করবো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কাজ করছি। এজন্য নির্বাচনকালে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা মোকাবেলায় কাজ করবো। গুজব মোকাবেলায় গণমাধ্যমের ভূমিকাও রয়েছে। অমুক থানায় পাঁচজন মারা গেছে এমন তথ্য শুনেই সংবাদ পরিবেশন করা ঠিক হবে না। নিজস্ব সোর্স ও দায়িত্বশীল লোকদের বক্তব্য জরুরি।
তিনি বলেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা কিন্তু ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ছবি তুলতে দিবেন না। কারণ নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধি সংক্রান্ত নির্দেশনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনি যা দেখবেন তাই বলতে পারেন। কিন্তু মনগড়া কিছু বলতে পারবেন না। আর কোনোভাবে প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না যে, সব পুলিশ ঠিক করে দেবে। মানুষের একটা মনস্তাত্বিক দিক হচ্ছে গুজব বা মিথ্যা তথ্য বিশ্বাস করা। যিনি যা ভাবছেন সেরকম কিছু পেলেই তা প্রকাশ করছেন সোস্যাল মিডিয়ায়। বিশেষ করে বিশ্বস্ত লোকজনের আরও সজাগ ও সহনশীল হবার প্রয়োজন রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মিডিয়া মিউজিয়াম অব বাংলাদেশ এর প্রধান ও এসএটিভির অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর এমএম বাদশার সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক ছিলেন সুজন সম্পাদক বদিউল ইলম মজুমদার, চ্যানেল২৪ এর বার্তা প্রধান রাহুল রাহা, ইনডিপেনডেন্ট টিভির সিএনই আশীষ সৈকত, এসএটিভির সিএনই ফৈরদৌস মামুন প্রমুখ।
জেইউ/এমবিআর/এমএস