‘সবার জন্য আইনের সমান প্রয়োগ না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৪২ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

‘একটা কথা বলা হচ্ছে, নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে। এই কথাটা অবশ্যই ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। কারণ আইনকে নিজস্ব পথে চলতে না দিলে, নির্বাচন কখনও আইনানুগ হতে পারে না। সুতরাং যখনই আমরা বলি নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে, তখনই এটাও বলতে হবে, আইনকে তার নিজস্ব পথে চলতে দিতে হবে। এটা করার দায়িত্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রোববার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংক্রান্ত ব্রিফিং বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার। এতে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আফ্রিকান একজন রাজা অভিনব কায়দায় বিচার করতেন। একটা গ্লাসে শরবত, একটাতে বিষ, আরেকটাতে পানি রাখা হতো। অভিযুক্তরা এসে বিষ পান করলে মারা যেতেন, পানি পান করলে অব্যাহতি পেতেন, আর শরবত পান করলে পুরস্কৃত হতেন। অনেকে তার বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। উত্তরে রাজা বলেছিলেন, আমি রাজা, বিচারক নই। আমি তো বিচারের আইনকানুন কিছু জানি না। যিনি অপরাধী তার বিচার করেন ভাগ্য বিধাতা। আমি পুরোটাই ভাগ্য বিধাতার হাতে ছেড়ে দিয়েছি। কারণ এই বিচারে তিনিই আসল বিচারক। সেই রাজার বিচার ব্যবস্থা এখন আর নেই। এখন বিচারকরাই বিচার করে থাকেন। তারাই এখন ভাগ্য বিধাতার প্রতিভূ।

তিনি বলেন, আপনাদের (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলার নেই। আপনারা সততা, আন্তরিকতা দিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। আইনের ব্যবহার সবার জন্য সমান হওয়া উচিত।

ইসি মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নিরপেক্ষভাবে আইনের প্রয়োগ না করলে তা আইন নয়, কালো আইন। সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ না করলে সে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। আমরা তা কখনও চাই না।’

সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব অপরিসীম। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটদেরও সমান দায়িত্ব। যারা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন, তারা যারাই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা (ম্যাজিস্ট্রেট) কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমরা শপথ গ্রহণ করলেও নির্বাচন সংশ্লিষ্টরাও আমাদের নির্বাচনী শপথের অংশীদার। শপথ আমরা গ্রহণ করলেও নির্বাচন আমরা করি না। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনারা (ম্যাজিস্ট্রেট)। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি অংশগ্রহণমূলক, পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন হবে। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, সব রাজনৈতিক দল এতে অংশ নিচ্ছে। সারা জাতি এই নির্বাচন নিয়ে উদ্দিপ্ত, উচ্ছ্বসিত। এই উদ্দিপনাকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এতে আপনাদের (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেনা বাহিনীও আপনাদের অধীনে দায়িত্ব পালন করবেন। শুধু দেশ নয়, বিশ্ববাসীও আমাদের জাতীয় নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে।

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, একটি নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও আইনানুগ করার জন্য সুষ্ঠু-স্বাভাবিক নির্বাচনী পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রয়োজন। এ দায়িত্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের। আর এই দায়িত্ব পালনের জন্য রয়েছে নির্বাচনী আইন, সিআরপিসি, প্যানাল কোড, আচরণ বিধিমালা। এই আইনগুলোকে আপনারা যথাযথভাবে প্রয়োগ করবেন। সেটা আমরা চাই। সবার জন্য একই আইন সমানভাবে সম কারণে প্রয়োগ করতে হবে। নইলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

অপর নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আমাদের সবার উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন, যা সবার আকাঙ্খার জায়গা। আইনের ব্যবহার প্রথম ম্যাজিস্ট্রেটদের করতে হবে। আপনারা মোবাইলকোর্ট পরিচালনা ও আচরণ বিধি লঙ্ঘণ হচ্ছে কিনা তা দেখে কর্মপরিধি রচনা করবেন। দায়িত্ব পালনে আপনারা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) যেন প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকেন। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সততা মেধার সঙ্গে আইনের ব্যবহার করতে হবে। প্রার্থীর পরিচয় মুখ্য, অন্য সবার পরিচয় গৌণ মনে রেখে দায়িত্ব পালন করলে নির্বাচনী শৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটবে না।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব.) ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক।

জেইউ/এমএমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।