ঘরে বসেই বিকল কিডনির সুচিকিৎসায় সিএপিডি


প্রকাশিত: ০৩:০৪ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০১৫

কিডনি বিকল রোগীদের সুচিকিৎসায় নতুন পদ্ধতি অ্যামবুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (সিএপিডি)। যেসব কিডনি ফেইলর রোগী ঘন ঘন হাসপাতালে আসতে চান না, যাদের জন্য হেমোডায়ালাইসিস চিকিৎসার সু-ব্যবস্থা নেই তারা সিএপিডি পদ্ধতিতে ঘরে বসেই চিকিৎসা নিতে পারেন। শুধু তাই নয়, এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা নেয়া কিডনি বিকল রোগীরা দৈনন্দিন কাজকর্মও করতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও কিডনি ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ -এর সভাপতি অধ্যাপক হারুন আর রশিদ বলেন, সিএপিডি পদ্ধতির চিকিৎসায় রোগীর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, ঘন ঘন রক্ত দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না, খাবারের ক্ষেত্রে তেমন বিধি-নিষেধও থাকে না। সিএপিডি হেমোডায়ালাইসিসের বিকল্প কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মঙ্গলবার কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
 
সেমিনারে আরো জানানো হয়, অনুমিত পরিসংখ্যান অনুসারে বাংলাদেশে ২ কোটি লোক কোনো না কোনো ভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর ধীরগতিতে কিডনি অকেজো হয় প্রায় ৩৫ হাজার লোকের। দেশের ২৩টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৩টিতে কিডনি রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে আছে ৮৬টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা ব্যয়বহুল।

হেমোডায়ালাইসিস, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন হলো কিডনি অকেজো রোগের চিকিৎসা। বর্তমানে সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৯৫টি হেমোডায়ালাইসিস ও ১০টি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে। ৮টি হাসপাতালে কিডনি সংযোজন করা হয়। চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতা ও ব্যয়বহুল হওয়ায় অর্থাভাবে বেশির ভাগ কিডনি রোগীর বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করে।

অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশীদ বলেন, কিডনি অকেজো রোগীদের চিকিৎসায় বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় কন্টিনিউয়াস অ্যামবুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (সিএপিডি)। একজন কিডনি অকোজো রোগী হেমোডায়ালাইসিস করে যতদিন বাঁচেন, সিএপিডি করে একই সময় বা তারও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারেন। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসার বাড়তি সুবিধা হলো- এই চিকিৎসা ঘরে বসেই নেয়া যায় এবং রোগী তার দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মেক্সিকো ও হংকং-এ ৮০ ভাগ, যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ ভাগ ডায়ালাইসিস সিএপিডির মাধ্যমে হয়ে থাকে। কানাডা, ইউরোপ, জাপান ও চীন ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই চিকিৎসা ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে এখনও সেভাবে প্রতিষ্ঠা পায়নি।

জানা গেছে, কিডনি ফাউন্ডেশন হেমোডায়ালাইসিসের বিকল্প হিসেবে সিএপিডিকে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

দেশের বিশিষ্ট কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম. হারুন আর রশিদ আরো জানান, যেসব কিডনি ফেইলর রোগী ঘন ঘন হাসপাতালে আসতে চান না, যারা ঘরে বসে চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক ও যেসব স্থানে হেমোডায়ালাইসিস চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, তাদের জন্য সিএপিডির বিকল্প নেই।

তাছাড়াও সিএপিডি রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, ঘন ঘন রক্ত দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না, খাবারের তেমন বাধ্যবাধকতা নেই এবং রোগীরাও বেশ উৎফুল্ল বোধ করেন বলেও জানান তিনি।

অধ্যাপক হারুন আর রশিদের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অ্যান্ড কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কিডনি ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এম. মুহিবুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনি ফেরদৌস রসিদ।

বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন সেশন পরিচালনা করেন অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ফিরোজ খান, অধ্যাপক শামীম আহমেদ, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম সেলিম, অধ্যাপক আইয়ুব আলী চৌধুরী, অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, অধ্যাপক আছিয়া খানম প্রমুখ।

এমইউ/এসকেডি/আরএস/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।