‘ফের ক্ষমতায় এলে ব্যবসায়ীদের জন্য বেশি সুযোগ সৃষ্টি করব’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চামড়া শিল্পের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন সরকার তা করবে। এতদিন তা করেছি। তিনি বলেন, অাবার যদি ক্ষমতায় অাসতে পারি তাহলে ব্যবসায়ীদের জন্য অারেও বেশি সুযোগ তৈরি করবে। অার যদি না অাসতে পারি যারা অাসবে তাদের দিয়ে সব কিছু করে নেবেন। কেননা বাংলাদেশ পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই, সেই কাজ অামরা করে এসেছি। দেশ এখন শুধু সামনের দিকে ধাবিত হবে।
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু অান্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সি শো ব্লিস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত একটি দেশ। কিন্তু তার চাওয়াটা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। মাত্র সাড়ে তিন বছর তিনি সময় পেয়েছিলেন। এ সাড়ে তিন বছরে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে একদিকে পুনর্বাসন-পুনর্গঠনের কাজ অপরদিকে ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি দেশ পরিচালনার যাত্রা শুরু করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি অর্জন করে দিয়ে যান। ১৫ আগস্ট আমাদের জীবনে যদি না আসতো তাহলে হয়তো বাংলাদেশ আগেই বিশ্বের বুকে উন্নত ও সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘টানা দশ বছর দেশ পরিচালনা করেছি। বিচারের ভার আপনাদের ওপরই ছেড়ে দিলাম যে, গত ১০ বছরে আমরা কতটুকু উন্নয়ন করতে পেরেছি। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বাংলাদেশের কতটুকু অগ্রগতি সাধন করতে পেরেছি। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রফতানি বৃদ্ধি দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান করা কতটুকু হয়েছে।’
বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রগতি নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ করব আজ সে প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে পেরেছি। সমগ্র বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্যাটেলাইট পৌঁছে দিয়েছি। ব্যবসায়ীরা যাতে ব্যবসা করতে পারে সেজন্য সঠিক নির্দেশনা বা ব্যবসা করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।
‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেন বাজার সৃষ্টি করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দেই। পাশাপাশি দেশের মানুষের আরও অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেন হয় সেদিকেও দৃষ্টি দেই।’
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সেখানে আমরা ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি উল্লেখ করে আওয়ামী সভাপতি বলেন, ‘পণ্য রফতানির জন্য বিদেশিদের জন্য যত সুযোগ-সুবিধা দরকার তা অামরা দেব। যেমন অনেক ক্ষেত্রে অামরা কোটা ফ্রি, ট্যাক্স ফ্রি দিয়ে থাকি। এগুলো আমরা করছি, এতে আমরা সফল হয়েছি। এর শুভ ফল দেশের মানুষ যেমন পাচ্ছে সেই সঙ্গে আপনারা যারা ব্যবসায়ী আছেন তারাও সুযোগ পাচ্ছেন।
‘ইতোমধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সারা বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলব। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হয় অথবা যৌথভাবে অথবা সরকার বা বিদেশি অথবা সরকার এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন এভাবে আমরা শিল্প গড়ে তুলব’-যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শিক্ষাখাতে উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষাকে আমরা বহুমুখীকরণ করছি যেমন বাংলাদেশে একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমরা সরকারে আসার পরে আরও তিনটি বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় করেছি। বাংলাদেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। আমরাই সরকার এসে ইতোপূর্বে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি এবং আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় করছি। আমাদের দেশে ছিল না টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি। তা অামরা করে দিয়েছি। মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি করেছি, গার্মেন্টস মালিকদের উৎসাহিত করতে করেছিলাম ফ্যাশন ডিজাইন ইউনিভার্সিটি। ফ্যাশন ডিজাইন শুধু পোশাকের জন্য নয়; জুতা থেকে শুরু করে স্বর্ণালঙ্কার পর্যন্ত হতে পারে।’
আওয়ামী সভাপতি বলেন, ‘আমাদের জনশক্তিকে দক্ষ্য জনশক্তি হিসেবে তৈরি করে তাদের আমরা কাজে লাগাতে পারি, সে সুযোগ আমাদের রয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত ট্যালেন্টেড। তারা কিন্তু যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে একটু সুযোগ দিলে তারা নিজেদেরকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারে। ইতোমধ্যে আমাদের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে, উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে- সব দিক থেকেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
এতদিন কূটনৈতিক ছিল পলিটিক্যাল, এখনকার কূটনীতি হয়েছে ইকোনোমিক্যাল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে অ্যাম্বাসেডর ঢাকায় ডেকে নিয়ে আসি এবং তাদেরকে নির্দেশ করি বাজার খোঁজার জন্য। যে যে দেশেই থাকেন সে দেশে কোন পণ্যের মার্কেট আছে তা খুঁজে বের করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে ফেলেছি।’
রফতানি বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা এবং বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে সুন্দর পণ্য তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিদেশি ব্র্যান্ডে বিক্রি হয়। লেবারদের একটু ট্রেনিং দিলে বিশেষ করে নারীরা তারা খুব যত্ন সহকারে কাজ করতে পারে।’
এফএইচএস/এসআর/জেআইএম