পর্যবেক্ষকরা গণমাধ্যমে কথা বলতে পারবেন না : ইসি সচিব
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা পর্যবেক্ষক হবেন তারা ভোটকেন্দ্রে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবেন। তারা শুধুমাত্র ভোট কেন্দ্রে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করবেন, কোনো মিডিয়ার সাথে নির্বাচনবিরোধী বিরূপ মন্তব্য বা কথা বলতে পারবেন না। ছবি তুলতে পারবেন না, গোপন কক্ষে যেতে পারবেন না। মোবাইলফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান।
ইসি সচিব পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, যখন আপনারা পর্যবেক্ষক নিয়োগ করবেন তখন কয়েকটি সাবধান বাণী উচ্চারণ করবেন। নির্বাচন কমিশনের দেয়া পরিচয়পত্র সার্বক্ষণিক গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। যাতে যে কেউ বুঝতে পারেন যে, আপনি একজন পর্যবেক্ষক। প্রথমে কেন্দ্রে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে নিজের পরিচয় দিতে হবে।
প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কেন্দ্রে কোনো মোবাইল ফোন নেয়া যাবে না, কোনো ছবি তুলতে পারবেন না, কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না, শুধু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন। সেই কেন্দ্রে যত সমস্যাই হোক সে পর্যবেক্ষণ করে আপনার কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করবেন। তারপর আপনি সবার কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে কম্পাইল করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন দেবেন। পর্যবেক্ষণের সময় গোপন কক্ষে যাওয়া যাবে না, কাউকে নির্দেশনা দিতে পারবেন না, প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসারকে কোনো পরামর্শ দিতে পারবেন না। এগুলো ক্লিয়ার করে বলে দেবেন। যদি কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হয়, এটা তারা কমিশনকে অবহিত করতে পারেন বা আপনাদেরও লিখিতভাবে অবহিত করতে পারেন।
সচিব আরও বলেন, অনেক সাংবাদিক তাদের (পর্যবেক্ষক) সামনে ক্যামেরা ধরবেন, কিন্তু কথা বলতে পারবেন না। কোনো সংবাদপত্র ও টিভিতে লাইভে কথা বলতে পারবেন না, মন্তব্য করতে পারবেন না। অর্থাৎ ব্রিটেনের পুলিশের মতো মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে শুধু পর্যবেক্ষণ করবে।
আপনাদের কাছে লিখিত রিপোর্ট জমা দেয়ার আগে কোনো মন্তব্য করবেন না। আপনারাও যখন কম্পাইল করে জমা দেবেন, তার আগে আপনারাও কোনো মন্তব্য করবেন না। রিপোর্ট কম্পাইল হলে প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন এবং আমাদের কাছে জমা দিতে পারেন। আপনাদের (পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি ও সংস্থা) আচরণ হবে নিরপেক্ষ। এমন কোনো ব্যক্তিকে আপনারা নিয়োগ করবেন না, যে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য। এগুলো আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে।
পর্যবেক্ষকদের দায়িত্বে বিষয়ে সতর্ক করে সচিব বলেন, একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন নিবন্ধন যাতে বাতিল না হয়। সে দিকে আপনারা খুব বেশি খেয়াল রাখবেন। আপনারা অনেকে কিন্তু এনজিও হিসেবে কাজ করেন। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি আপনারা নির্বাচনেও কাজ করেন। কিন্তু এখান থেকে যদি আমরা রিপোর্ট দেই যে, আপনি এই ধরনের একটি আচরণ করেছেন। যেটার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়াটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। তাহলে কিন্তু আপনার নিবন্ধনটা বাতিল করার জন্য... যারা নিবন্ধন দেয়... তাদেরকেও আমরা চিঠি দিয়ে দেবো। সুতরাং বি কেয়ারফুল। আপনারা এমন কোনো আচরণ করবেন না, এমন কোনো কাজ করবেন না যেটার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়াটা ভণ্ডুল হতে পারে বা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
হেলালুদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে যে, নির্বাচন আর পেছানো হবে না। আপনারা জানবেন এবারের নির্বাচন একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নির্বাচন। কারণ, এই নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে এবং বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এবারের নির্বাচনে সংসদ বহাল থাকবে, সরকার থাকছে এবং সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যার ফলে এবারের নির্বাচন হবে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। আমি আশা করবো এবারের নির্বাচনটা সৌহার্দ্যপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।
সচিব বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ভিডিপি, কোস্টগার্ডের সদস্যদের নিয়োগ করা হবে। এবার প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে আমরা নিবন্ধন দিয়েছি। প্রথমে আপনারা এনজিও ব্যুরো থেকে নিবন্ধিত হন। তারপর আমরা আহ্বান করলে আপনারা আবেদনপত্র দেন। তারপর আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে কমিশনের অনুমোদন নিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেই...এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি-না। যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে আমরা শুনানি গ্রহণ করে সেগুলো নিষ্পত্তি করি। তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমতি দিয়ে থাকি।
তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের ১১৯টি পর্যবেক্ষক সংস্থা ছিল। তার মধ্যে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে এনজিও ব্যুরো থেকে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দফতর থেকে অভিযোগ আসায় নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালা অনুসরণ করে সেটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে সচিব বলেন, একটি সেন্টারে অনেকগুলো সংস্থার লোক থাকবে। পোলিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যম থাকবে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আপনাদের জন্য যে নীতিমালা সেটি অনুসরণ করে দায়িত্বপালন করবেন। একজন পর্যবেক্ষকের কারণে কিন্তু আপনি নিজেও বিপদে পড়ে যাবেন। আমাদের নীতিমালায় বলা আছে যে, আপনি যদি কোনো শর্ত ভঙ্গ করেন, তাহলে কিন্তু আপনাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যেতে পারে। এজন্য খুব সতর্কভাবে এ পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ফলো করে (মেনে) দায়িত্বপালন করবেন।
জেইউ/এনএফ/জেআইএম