প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ইসিকে সহযোগিতার নির্দেশনা
প্রশাসনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
নির্বাচন কমিশনের আধা-সরকারি পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ‘নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১’ এর অনুসরণীয় বিধানগুলো উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
একই সঙ্গে ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১-এর বিধান অনুসরণ’ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে আরেকটি নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে অর্পিত দায়িত্ব পালন সংশ্লিষ্ট সবার কর্তব্য। নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় জানিয়েছে, নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং এবং পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি এবং সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নির্বানের কাজে প্রত্যক্ষভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থার স্থাপনা, অঙ্গণ ভোটগ্রহণের কাজে ভোটকেন্দ্র হিসেবে এবং ওই সব প্রতিষ্ঠারে আসবাবপত্র নির্বাচনে ব্যবহৃত হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি দফতর, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতীতের মতো এ নির্বাচনেও কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে সরকার আশা করে।
নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণের বিধান সংবলিত নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ অনুসারে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত যেকোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী উক্তরূপে নিয়োগের তারিখ থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি না পাওয়া পর্যন্ত তার নিজ চাকরির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রেষণে চাকরিরত বলে গণ্য হবেন বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, প্রেষণে চাকরিরত অবস্থায় তিনি নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষেত্রমতে রিটার্নিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন এবং তাদের যাবতীয় আইনানুগ আদেশ বা নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকবেন। প্রেষণে থাকাকালে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব অগ্রাধিকার পাবে।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজে অর্পিত দায়িত্ব আইন ও বিধি মোতাবেক নিরপক্ষেভাবে পালনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা ও সহায়তার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের অধীন সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে আদেশে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের প্রতিও একই নির্দশনা জারি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ১৫ দিন সময় অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা যাবে না। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোকে নির্বাচনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি প্রদান এবং অন্যত্র বদলি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
উল্লিখিত নির্দেশনা জারিসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপক্ষে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক সহায়তা করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক; বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপি এবং র্যা বের মহাপরিচালক; সব বিভাগীয় কমিশনার; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক; সব পুলিশ কমিশনার, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা, সব পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার, জেলা নির্বাচন অফিসার, আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ডেন্ট, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনার অনুলিপি দেয়া হয়েছে।
অপর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব পালনে অনীহা, অসহযোগিতা, শৈথিল্য, ভুল তথ্য প্রদান ইত্যাদির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অসদাচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
তাই সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্ত্বশাসিত/আধা-স্বায়ত্ত্বশাসিত/বেসরকারি দফতর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা/শিক্ষক/কর্মচারীকে সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান সম্পর্কে সচেতন থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই নির্দেশনায়।
আরএমএম/এনডিএস/পিআর