রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন : ‘প্রথম ব্যাচ মিয়ানমারের জন্য পরীক্ষা’
আসছে ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসন শুরুর দিন নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। তবে প্রত্যাবাসনের প্রথম ব্যাচটিকে মিয়ানমারের জন্য পরীক্ষা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সূত্র জাগো নিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো প্রথম ব্যাচটি হবে একটি টেস্ট কেস। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া এসব রোহিঙ্গার সঙ্গে মিয়ানমারে কীভাবে আচরণ করবে এদের মাধ্যমে তা জানা যেতে পারে। যেহেতু দেশটি রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছে,’ বলেন সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও তখন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবে। যদি প্রত্যাবাসন শুরুই না হয়, তাহলে তো আপনি কিছু বলতে পারবেন না।’
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সেখানকার প্রকৃত বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে হলে প্রত্যাবাসন শুরু করতে হবে।’
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কেউ কেউ একটি ধারণা দিতে চেষ্টা করছে যে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুকে একটি ‘ব্যবসায়িক উদ্যোগ’হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চায় না। এটা একেবারেই ভুল।
আগামী ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে। প্রথমে ২২৬০ জন রোহিঙ্গার ফেরতের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। যার মধ্যে ৪৫০ জন হিন্দু রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র আরও জানায়, এ ৪৫০ জন হিন্দু স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে ইচ্ছুক এবং তাদের মধ্যে ৬৬ জনের বৈধ নাগরিক সনদ রয়েছে। তাদের আর যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই।
এদিকে শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘কতজন এখন ফেরত যাচ্ছে সে বিষয়ে আমরা কিছু বলতে চাই না। ফিরে যখন যাবে তখন সংখ্যাটি জানব।’
তিনি বলেন, ‘নতুন করে আরও ২২ হাজার রোহিঙ্গা ফেরতের জন্য তালিকা মিয়ানমারকে দেয়া হয়েছে। তারা যাচাই করে জানাবে। প্রত্যাবাসন শুরু হলে চলবে, এটা চলমান প্রক্রিয়া।’
শহীদুল হক বলেন, ‘সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে যে সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা এখন অবস্থান করছে, তাদের বাড়িঘর ঠিকই আছে। তাদের বাড়িঘরে ফেরতের বিষয়ে আইসিআরসি সহযোগিতা করবে। মিয়ানমার সরকার আইসিআরসিকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় গত ফেব্রুয়ারিতে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম তালিকায় ১৬৭৩টি পরিবারের ৮ হাজার ২ জন রোহিঙ্গার নাম পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ।
ওই তালিকা যাচাই করে মিয়ানমার তাদের স্বীকার করে নিয়েছে বলে গত ১৫ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
চুক্তির সময় দুই বছরের মধ্যে ৭ লাখের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্য ঠিক করা হলেও মাত্র আট হাজারের প্রথম তালিকা যাচাই করতেই মিয়ানমার সরকার সময় নিয়েছে প্রায় ৯ মাস।
গত কয়েক দশকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিলিয়ে মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ নাগরিক বাংলাদেশে থাকলেও চুক্তি অনুযায়ী আপাতত শুধু নতুন আসা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে।
জেপি/এনডিএস/আরআইপি