বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়


প্রকাশিত: ০৬:৫৬ এএম, ১৭ আগস্ট ২০১৫

বাংলায় একটি কথা আছে- ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়।’ জাগো নিউজে ‘সচিবের গাড়ির কনস্টেবলও সচিব’ শিরোনামের খবরটি সেই কথাটিই আবার প্রমাণ করলো। শুধু ক্ষমতাসীনরাই  নয় তাদের আশপাশে যারা থাকেন অনেক সময় তাদের দাপট মূল ব্যক্তিকেও ছাড়িয়ে যায়। ধরাকে সরা জ্ঞান করেন তারা। কিছু হলে বস তো আছেই। কিন্তু বসের ওপরও তো বস আছে। কিংবা বলা যায় সবাই তো আর ক্ষমতার দাম্ভিকতার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন না। দেশে চুনোপুঁটি হয়ে রাঘববোয়ালের মত আচরণ করার মত মানুষ যেমন আছে তেমনি আছে দায়িত্বশীল এবং নীতিবান মানুষও। নাইলে সমাজটা টিকে কী করে!

নজর দেয়া যাক সেদিনের ঘটনাটির দিকে। বিকেল সাড়ে ৩টা। নীলক্ষেত কাঁটাবন চৌরাস্তার মোড়ে প্রচণ্ড যানজট। যানজট সামলাতে মরিয়া হয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট ও জনা দুয়েক ট্রাফিক কনস্টেবল। সিগন্যালের সবুজ বাতি জ্বলে ওঠার আগেই বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও রিকশার এগিয়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে  সার্জেন্টকে হাতে মোটা লাঠি নিয়ে ছুটোছুটি করতে দেখা গেল। নীলক্ষেত মোড় থেকে আসা গাড়িগুলো তখন সোজা উত্তর দিকে হাতিরপুল ও পূর্ব দিকে শাহবাগ মোড়ের দিকে যাচ্ছিল।

এমন সময় পশ্চিমদিক থেকে রাস্তার উল্টোপথে দ্রুতবেগে কাঁটাবন মোড়ের দিকে ধেয়ে আসলো একটি দামি পাজেরো গাড়ি। গাড়ির সামনের আসনে গাড়িচালক ও তার সাথে ইউনিফর্ম পরিহিত এক পুলিশ সদস্য। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করতে দেখে সেদিকে ছুটে গেলেন পুলিশ সার্জেন্ট অপূর্ব। হাত দিয়ে ইশারা করে থামার নির্দেশ দিলেন। পুলিশ কনস্টেবল কিছুটা মেজাজ দেখিয়ে হাত দিয়ে সামনে থেকে সরে যাওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, সচিব স্যারের গাড়ি, সরে দাঁড়ান, তাড়া আছে, যেতে হবে।  সচিবের কনস্টেবল হয়তো ভাবছিলেন হুঙ্কার ছেড়েই পার পাওয়া যাবে। কিন্তু না, প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট অপূর্ব।

হুঙ্কার ছেড়ে ধমকে উঠে ড্রাইভারকে লক্ষ্য করে বললেন, গাড়ি পেছনে নিন। যে দিক থেকে এসেছেন সে দিক ফেরত যান। সারাদিন রাস্তায় রোদে পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজে যানজট নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি, তারপরও বদনাম হয়। আর আপনাদের মতো সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উল্টোপথে এসে যানজট আরো বাড়ান। নিজেদের ভাবেন কী?

এ সময় সার্জেন্ট বলেন, গাড়ির কাঁচ নামান, দেখি কোন স্যার আছেন। এ কথায় গাড়িচালককে কিছুটা ইতস্তত হতে দেখা গেলে জোরে ধমক দিয়ে জানালার কাঁচ খুলে দেখতে পান ভেতরে কেউ নেই। অর্থাৎগাড়ির ভেতর সচিব মহোদয় নেই।

কিন্তু তাতে কি, সচিবের গাড়ি বলে কথা! সেই গাড়িকে আইন-কানুন মেনে চলতে হলে এত বড় কর্তার সম্মান বলে কিছু থাকে! তাই তো উল্টো যাত্রা। কিন্তু রথের উল্টোযাত্রায় বাধা নেই। যে রাজধানীতে সারাক্ষণ যানজট লেগেই থাকে সেখানে ভিআইপি পরিচয়ে উল্টোপথে চলতে গেলে বিপত্তিতো বাধবেই। তাই ট্রাফিক সার্জেন্ট নিয়মমাফিক চলার পথ বাতলে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন কনস্টেবলের দায়িত্বের কথাও ।

একটি দেশ বা সমাজ কতোটা সভ্য সেটি নাকি বোঝা যায় রাস্তায় আইনমানার প্রবণতা থেকে। সেটা সাধারণ মানুষ হোক আর মন্ত্রী, সচিব যত ভিআইপি, ভিভিআইপিই হোন না কেন। সেদিক থেকে আমাদের দেশের রাস্তায় আইন মানার প্রবণতা অত্যন্ত খারাপ। সর্বত্রই আইন ভাঙার হিড়িক। আর যদি ক্ষমতাশালী কেউ হন তাহলে তো কথাই নেই। এই অবস্থা থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। কথায় আছে- ‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও।’ তাই সবার আগে শুধরে নিতে হবে নিজেকেই। রাস্তায় সার্বিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে আর কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/পিআর

# সচিবের গাড়ির কনস্টেবলও সচিব!

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।