সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে স্থবির মামলা


প্রকাশিত: ০৬:০১ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৫

সিরিজ বোমা হামলার ১০ বছর আজ। ২০০৫ সালের এই দিনে দেশব্যাপি সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে প্রকাশ্যে এসেছিল জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওই ঘটনায় দায়ের করা ১৬১ মামলার এখনো নিষ্পত্তি হয়নি ৫৩টি। সাক্ষীদের আদালতে অনুপস্থিতির কারণে এসব মামলা স্থবির হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ১০ আগস্ট গাজীপুরের একটি মামলার রায় ঘোষণা হয়। ৬৬০ আসামির মধ্যে ১৫ জনের ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন আদালত। এর মধ্যে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হলেও ৯ দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামির রায় কার্যকর হয়নি।

আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সিরিজ বোমা হামলার ১৬১টি মামলার মধ্যে ১০৮ মামলার নিষ্পত্তি হয়। এসব মামলায় আটক হয়েছে ৪৫৫ জন, এর মধ্যে জামিনে আছে ৩৫ জন। বাকি ৫০ জন পলাতক। ১১৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।

এরপরেও সিরিজ বোমা হামলার ৫৩ মামলা বিচারাধীন বলে জানা গেছে। এসব মামলার সাক্ষীদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও পুলিশ তাদের হাজির করছে না। এমনকি পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হচ্ছেন না।

মামলার সাক্ষী ও সরকারি আইন কর্মকর্তাদের অবহেলায় এসব মামলা ঝুলে যাওয়ায় পলাতক ও জামিনে মুক্ত জঙ্গিরা আবার জঙ্গি তৎপতায় জড়িয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে লিপ্ত হচ্ছেন বলেও গোয়েন্দা সূত্রের দাবি।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের জেএমবি বোমার বিস্ফোরণে দু’জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। ওই হামলার মধ্য দিয়ে এই জঙ্গি সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে।

সিরিজ বোমা হামলার মামলায় জেএমবির তখনকার শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ প্রায় সাড়ে সাত শ’ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় আদালত সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেন। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে শায়খ আবদুর রহমানসহ শীর্ষ ছয় জঙ্গি নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপর জঙ্গি আসাদুর রহমান আরিফ পলাতক রয়েছে। ওই ছয় জঙ্গির পরে আর কারো ফাঁসি কার্যকর হয়নি।

২০০৫ সালে দেশব্যাপি সিরিজ বোমা হামলা মামলার সর্বশেষ রায়টি আসে চলতি বছরের গত ১০ আগস্ট ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে। এদিন গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ১৭ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রাজধানীতে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মোট ১৮টি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে এখনো ঢাকার আটটি নিম্ন আদালতে ১৭টি মামলা বিচারাধীন। পাঁচটি মামলা স্থবির অবস্থায় রয়েছে।

ঢাকার আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর ২৫৬ জন সাধারণ সাক্ষীর বিরুদ্ধে আদালত জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রেখেছেন। আর ১৫০ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও জারি রয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা।

ঢাকা মহানগর আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল্লাহ আবু জাগো নিউজকে বলেন, সাক্ষী না পাওয়ার কারণে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। সাক্ষী হাজিরের জন্য তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির পরেও ঠিকানা অনুযায়ী তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এ কারণে সাক্ষী কার্যক্রমই শেষ হচ্ছে না। তবে মহানগরীর ১৮টি মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে একটি। বাকিগুলোর ৯টিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) নজরুল ইসলাম বলেন, সিরিজ বোমা হামলার অধিকাংশ মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। ওই মামলাগুলোর বেশিরভাগ আসামিও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

জেইউ/এসএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।