মিয়ানমারের ওপর চাপ জোরদারের আহ্বান রাষ্ট্রপতির
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের টেকসই শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ জোরদার করার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আন্তর্জাতিক সমস্যা আন্তর্জাতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। তিনি মিয়ানমারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সনাক্ত করে সকল প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকল সদস্যের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশে সম্প্রতি প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় নেয়ার ঘটনাকে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গ্র্যান্ড হোটেল কেমপিনস্কিতে প্লিনারি হলে বিশতম হোমল্যান্ড অ্যান্ড গ্লোবাল সিকিউরিটি ফোরামের ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দৃঢ় করা : শান্তি ও নিরাপত্তায় ঝুঁকি’ শীষর্ক উদ্বোধনী অধিবেশনে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।
ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে যোগ দিতে গত ২২ অক্টোবর পাঁচদিনের সরকারি সফরে জেনেভা পৌঁছান রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সেখানে গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার পরও এসব অসহায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, স্বাস্থ্য সেবা, শিশুযত্ন এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। রাষ্ট্রপতি আন্তর্জাতিক সংস্থায় সহায়তা প্রদানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঘটনাটি কোনো আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি ‘টেস্ট কেস’ এবং শান্তি ও নিরাপত্তা প্রশ্নে ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি ‘টেস্ট কেস’ হতে পারে।
ধংসাত্মক অস্ত্র বিস্তারের কারণে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্থানীয় অথবা আঞ্চলিক বিরোধ বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে এবং দুঃখজনকভাবে বিরোধিতাকারিদের ওপর চাপ সৃষ্টির পরিবর্তে দেশগুলোকে বিভিন্ন অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। সাইবার হামলা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর বিরূপ প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, পানি সংকট, অসহনীয় সামাজিক বিরোধের মতো নতুন নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, শান্তি এখন নেই বললেই চলে এবং নিরাপত্তার চিরাচরিত সংজ্ঞাও যেন বদলে যাচ্ছে। এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতি আরও প্রভাবিত করা হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব অমাদের উন্নয়নের অনন্য সম্ভাবনা উপহার দিয়েছে। একই সময়ে মানবতা আজ বিপর্যস্ত। ২০৫০ সালের মধ্যে ৯শ কোটির বেশি জনসংখ্যার জন্য খাদ্য সরবরাহে বিশ্ব এখনো প্রস্তুত নয়।
ক্রান মোনতানা ফোরামের অবৈতনিক চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা জিন পল কার্টেরন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অ্যামেনিয়া আরমিনের প্রেসিডেন্ট সারকিসিয়ান, মোন্টেনিগ্রোর প্রেসিডেন্ট ফিলিপ ভুজানোভিস এবং লেসোথোর প্রধানমন্ত্রী টমাস মোতসোয়া হেতাবানে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। রাষ্ট্রপতি পরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এনএফ/এমএস