স্যালাইনের ভয়াবহ সংকটে চিকিৎসা ব্যাহত

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:২৪ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব গুরুদাস মণ্ডল রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন।

মেয়ে দীপালী রানী মণ্ডল মুমূর্ষু বাবাকে নিয়ে ঢামেকে আসেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পা রাখতেই চিকিৎসকরা সাদা কাগজে স্যালাইন, ইনজেকশন, মাইক্রোপোর ও সুই-সুতা লিখে দ্রুত আনতে বলেন। একদিকে অসুস্থ বাবা, অপরদিকে বাক্স-পেটরা সব ফেলে ফার্মেসিতে দৌড় দেন দীপালী।

বুধবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় দীপালী রানীর। বলেন, ‘বাবার চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়ে স্যালাইন ও ইনজেকশন কিনেছি। সেটা বড় কথা নয়, কিন্তু মুমূর্ষু রোগীর দ্রুত চিকিৎসায় সরকারি এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী না থাকার বিষয়টি পীড়া দিয়েছে।’

দীপালীর কথার সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের অন্যতম বৃহৎ এ সরকারি হাসপাতালে গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে স্যালাইন ডিএন, ডিএনএ, নরমাল ও হার্টসল ইন্ট্রাভেনাসসহ (আইভি) কোনো প্রকার স্যালাইনের সরবরাহ নেই। ফলে দুই হাজার ৬০০ শয্যার এ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্যালাইনের অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে জরুরি বিভাগ ও নিউরোসার্জারি বিভাগে সমস্যা বেশি হচ্ছে।

জানা গেছে, নিউরোসার্জারির তিন ওয়ার্ডের ছয়টি ইউনিটে বেড সংখ্যা একশোর মতো হলেও রোগী থাকছে তিনগুণেরও বেশি। সড়ক দুর্ঘটনা ও বহুতল ভবন থেকে পড়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের এ ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউরোসার্জারি বিভাগের একাধিক চিকিৎসক ও নার্স জানান, গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জরুরি চিকিৎসা দেয়ার জন্য সুই-সুতা, স্যালাইন ও ইনজেকশনের সরবরাহ না থাকায় রোগীদের সেবা দেয়া যাচ্ছে না।

তারা আরও জানান, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাতপ্রাপ্তদের রক্তপাত বন্ধ করতে হার্টসম্যান সলিউশন স্যালাইন অত্যাবশ্যক। এছাড়া মস্তিষ্কের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে বারবিট এবং অস্থিরতা দূর করতে হেলোপেরিডল ইনজেকশনের দ্রুত প্রয়োজন হয়। বর্তমানে অত্যাবশ্যক এ স্যালাইন ও ইনজেকশনের সরবরাহ না থাকায় চিকিৎসা বিঘ্নিত হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ক্ষতস্থান সেলাইয়ে ব্যবহৃত সুই-সুতা ও ব্যান্ডেজের জন্য মাইক্রোপোরও সরবরাহ নেই।

১০০ নম্বর ওয়ার্ডে কর্তব্যরত এস এম আজাদ নামের এক সিনিয়র স্টাফ নার্স জানান, সাময়িকভাবে স্যালাইনের সংকট থাকলেও খুব শিগগিরই সরবরাহ শুরু হবে বলে জানা গেছে।

হাসপাতালের এক শীর্ষ কর্মকর্তা স্যালাইন সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, সরকারি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের আইভি ফ্লুইড উৎপাদন ইউনিট থেকে স্যালাইন সরবরাহ একেবারে বন্ধ রয়েছে। টেন্ডার ছাড়া বাইরে থেকে স্যালাইন কেনা যায় না।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে স্যালাইনের জন্য টেন্ডার হয়েছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবে ইনজেকশন, সুই-সুতা ও মাইক্রোপোর সরবরাহে ঘাটতি থাকলেও একেবারে বন্ধ নেই বলে জানান তিনি।

এমইউ/এমএইচএম/এএইচ/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।