দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছি। দেশ সেবার সুযোগ পেয়ে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার অসমাপ্ত কাজে হাত দিয়েছি। এলাকাবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, এই পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যারা এই সেতুবন্ধ করার ষড়যন্ত্র করেছে সেতু বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে তাদের যেন উপযুক্ত জবাব দিতে পারি।
রোববার মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন, মুন্সীগঞ্জ এন-৮ মহাসড়কের ঢাকা-মাওয়া এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি পরিদর্শন (মাওয়া প্রান্ত), পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন (মাওয়া প্রান্ত), মূল নদীশাসন কাজ সংলগ্ন স্থায়ী নদীতীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের শুভ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এ পদ্মা সেতুর কারণে আমার ছেলে-মেয়ে, আমার ছোট বোন রেহানার ছেলে-মেয়েসহ গোটা পরিবারকে মিথ্যা অপবাদ দেয়ায় মানসিক যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে। সবাই একটা অশান্তির মধ্যে দিন কাটিয়েছে। আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে হেয় করা হয়েছে। ড. ইউনূসের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যারা গরিবের ওপর জুলুম নির্যাতন করে সেই সুদখোর কখনও দেশকে ভালোবাসতে পারে না। তারা দেশের উন্নতি চায় না।
উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমুদ্রসীমা বিজয়, সীমান্ত সমস্যা নিরসন, দীর্ঘদিনের ছিটমহল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ মেগা প্রকল্পগুলো সরকার বাস্তবায়ন করে চলছে। এসব উন্নয়নযজ্ঞে আপনাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর গত ১০ বছরে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার কমানো, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, অবাধ-তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ স্থাপন প্রকল্প, ঢাকা-মাওয়া ও পাচ্চর-ভাঙ্গা মহাসড়কের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প এবং মাওয়া-কান্দিপাড়া-যশোলদিয়া এলাকায় ১৩০০ মিটার নদীতীর স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজের উদ্বোধন হলো আজ। দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা কথিত দুর্নীতির অজুহাতে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থায়ন করা হতে বিরত থাকে। এ অবস্থায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা ছিল আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। সাহসের সাথে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কোটি মানুষের প্রাণের দাবি পূরণ করতে চলেছি। সব চক্রান্ত রুখে দিয়ে বিশ্বের কাছে আমরা প্রমাণ করেছি, ‘আমরা পারি’। কারণ বাঙালিকে ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবে না’।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই গর্বের সেতু নির্মিত হচ্ছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে। দ্বিতল পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে স্টিল ও কংক্রিট স্ট্রাকচারে। বহুমুখী এই সেতুর ওপরের ডেক দিয়ে যানবাহন এবং নিচের ডেক দিয়ে চলাচল করবে ট্রেন। এর নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকার সাথে সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে, ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং তাদের জীবনযাত্রার উন্নয়ন হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১.২% বৃদ্ধি এবং প্রতি বছর ০.৮৪% দারিদ্র্য নিরসন হবে। ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটির সর্বশেষ পঞ্চম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে মূল অবকাঠামোর ৭৫০ মিটার বর্তমানে দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর ভৌত অগ্রগতি ৭০%।
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন ঘোষণা করে তিনি বলেন, চীনের দক্ষ ও অভিজ্ঞ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড’ নির্ধারিত সময়ে গুণগতমান বজায় রেখে নির্মাণকাজ সমাপ্ত করবে বলে আমি আশাবাদী। দেশের আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এবং সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ প্রকল্পে পরামশর্কের দায়িত্ব পালন করছে। আমি আশা করি, পদ্মা বহুমুখী সেতু চালুর দিন থেকেই সড়কে যানবাহনের পাশাপাশি ট্রেন চলাচল করবে।
এফএইচএস/এনএফ/পিআর